বিদ্যুতের ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স

সর্বশেষ আপডেট:

পূর্বকথা: আগস্টের __ তারিখ। না, তারিখটি খেয়াল নেই। মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে দেখি নিচতলায় বিদ্যুৎ নেই। তাদের মিটার অ্যালার্ম দিচ্ছে। গরমে ও অন্ধকারে নিচতলার লোকজন কষ্ট করছে, কিন্তু কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আল্লাহ্‌র রহমতে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু করার চিন্তাটি আমার মাথায় এলো। ৮১১ চেপে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু করে দিলাম। সাথে পেলাম দুআ আর ভালোবাসা। অথচ একই পরিস্থিতিতে আমিও একবার পড়েছিলাম। কী করতে হবে, তখন মাথায় আসেনি। আজ আসলো, আলহামদুলিল্লাহ। ভবিষ্যতে কেউ যেনো ভোগান্তিতে না পড়েন, সে কামনায়…

বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণ ও সমাধান:

সম্ভাব্য কয়েকটি কারণে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

  1. লোডশেডিং: চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলে, কিছু কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। একে লোডশেডিং বলে। লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা।
  2. মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাওয়া: প্রিপেইড মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট বাসায় বিদ্যুৎ চলে যায়। সেক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়।
  3. ওভারলোড: প্রিপেইড মিটারের অনুমোদিত লোডের বেশি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। যেমন, কোনো বাসায় ব্যবহৃত মিটারের অনুমোদিত লোড ১ কিলোওয়াট বা ১০০০ ওয়াট। এখন ১০০০ ওয়াটের বেশি মানের কোনো যন্ত্র (ইলকট্রিক কেতলি, ইস্ত্রি ইত্যাদি) ব্যবহার করলে ঐ বাসায় বিদ্যুৎ চলে যাবে। কিছুক্ষণ পর আপনা-আপনিই বিদ্যুৎ চলে আসবে। ব্যবহার অব্যাহত রাখলে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা চলতে থাকবে। এক্ষেত্রে উক্ত সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করতে চাইলে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে মিটারের লোড বাড়িয়ে নিতে হবে।
  4. মিটারের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়া: প্রিপেইড মিটারের ভিতরে একটি ব্যাটারি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ব্যাটারিটি নষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে নতুন আরেকটি ব্যাটারি লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়।
  5. মিটার লক হয়ে যাওয়া: প্রিপেইড মিটারে সিকিউরিটির জন্য অটোলক সিস্টেম রাখা হয়েছে। ফলে কেউ মিটার খুলতে চাইলে বা টেম্পারিং করতে চাইলে মিটারটি লক হয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
  6. বিচ্ছিন্ন সংযোগ: কাটআউট খুলে যাওয়া, ফিউজ কেটে যাওয়া ইত্যাদি কারণেও বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে।

ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু করার উপায় ও ডায়ালিং কোডসমূহ:

রিচার্জকৃত টাকা শেষ হবার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালুর প্রয়োজন পড়ে। প্রিপেইড মিটারের ব্র্যান্ড ও মডেলের উপর নির্ভর করে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালুর বিষয়টি ভিন্ন হয়ে থাকে।

  1. স্মার্ট কার্ড টাইপ মিটার:
    সরবরাহকৃত স্মার্ট কার্ডটি মিটারের নির্দিষ্ট জায়গায় পাঞ্চ করার মাধ্যমে টাকা রিচার্জ করা যায়। (DESCO)
  2. কিপ্যাড টাইপ মিটার:
    1. ৮১১: Hexing Electrical Company. Ltd.
    2. ৮৯৮৯৮৬৮৬: Inhe
    3. ৮০৯: Linyang
    4. ৯৯৯৯৯: স্মার্ট মিটারে তথ্য দেখার শর্টকোড – NESCO
    5. ০০: পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

মিটারে ব্যালেন্স শেষ হওয়ায় বিদ্যুৎ চলে গেলে কী করবো?

হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। দেখা গেলো মিটারের ব্যালেন্স শেষ। এখন কী করবো? এ রকম সমস্যায় অনেকেই পড়ে থাকেন। আমিও একবার পড়েছিলাম। কথায় বলে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। আমারও একই অবস্থা হয়েছিলো।

আমি সাধারণত মিটারে কিছু ব্যালেন্স থাকতে থাকতেই আবার রিচার্জ করে ফেলি। কোনো কারণে একবার রিচার্জ করা হয়নি। দিনটি ছিলো রবিবার। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় গরমে কষ্ট করেছি। মাথায় শুধু একটি চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিল। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটার রিচার্জ করতে হবে। তারপরেই না বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। রবিবার হওয়ায় রিচার্জ পয়েন্টে দীর্ঘ লাইন। আমার বড় ভাই অনেক কষ্ট করে টোকেন নিয়ে এসে মিটার রিচার্জ করলো। পেলাম কষ্টার্জিত বিদ্যুৎ।

কেমন বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা মোটামোটিভাবে আমার জানা হয়ে গিয়েছে। গরমের সময় যত খরচ হয়, শীতে হয় তারচে’ অনেক অনেক কম। আমার ক্ষেত্রে, আগস্ট-অক্টোবরের গরমে মাসে যে খরচ হয়, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৫ মাসে প্রায় একই খরচ হয়। এর উপর ভিত্তি করে আমি গরমের সময় ১৫-২৫ দিন পরপর, আর শীতের সময় ১-২ মাস পরপর মিটারের ব্যালেন্স চেক করি। ব্যালেন্স ৩০-৬০ টাকায় নেমে এলে পুনরায় রিচার্জ করে নিই। সুতরাং যাদের সামর্থ আছে তারা আমার মতো ব্যালেন্স থাকতে থাকতেই রিচার্জ করে নিতে পারেন। তাহলে অযথা ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

যাই হোক, আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে গিয়েছি। তো মিটারের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রথমে কী করা উচিত? আমার মতো অনেকেই প্রথমে মিটার রিচার্জের কথা ভেবে থাকেন। আমি বলবো, মিটার রিচার্জের আগে আমরা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু করতে পারি। এতে মিটার রিচার্জ করতে গিয়ে যতটুকু দেরি হবে, ততক্ষণ ঘরের লোকজনকে কষ্ট পেতে হবে না।

ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু করার পর যতো টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে, পরবর্তীতে মিটারে টাকা রিচার্জের সময় ততো টাকা সমন্বয় করা হবে। ধরা যাক, ৫০ টাকার ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স ব্যবহার করলাম। এখন রিচর্জ পয়েন্টে গিয়ে ৫০০ টাকা রিচার্জ করে হয়তো ৪৩০ টাকার নিট ব্যালেন্স পেলাম। তারপর মিটারে টাকাটা রিচার্জের সময় পূর্বোক্ত ব্যবহৃত ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের ৫০ টাকা কেটে রাখবে। অর্থাৎ ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স সমন্বয়ের কারণে সব মিলিয়ে আমি (৪৩০-৫০) = ৩৮০ টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।