বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার

সর্বশেষ আপডেট:

বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে এবং বিদ্যুতের যথাযথ হিসাব রাখতে সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। গ্রাহকবান্ধব এই মিটারটিতে অ্যানালগ মিটারের সমস্যাগুলো নেই। আবার মিটারে টাকা রিচার্জ করাটাও বেশ সহজ। ফলে একদিকে যেমন গ্রাহকদের ভোগান্তি কমেছে, আবার অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাত থেকে সরকারের আয়ও বেড়েছে।

প্রিপেইড মিটারের প্রকারভেদ:

বাংলাদেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার দু’রকমের হয়ে থাকে।

  1. কিপ্যাড টাইপ: “ইউনিট ট্রান্সফার সিস্টেম” এবং “কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেম” – এ দু’ধরনের টেকনোলজিই এতে রয়েছে। এ মিটারে টাকা রিচার্জ করা, ব্যালেন্স দেখা ইত্যাদি কাজ বোতাম টিপে টিপে করতে হয়।
  2. স্মার্ট কার্ড টাইপ: কেবল “কারেন্সি ট্রান্সফার সিস্টেম” টেকনোলজি এতে রয়েছে। গ্রাহককে সরবরাহকৃত স্মার্ট কার্ডটি ভেন্ডিং স্টেশন থেকে রিচার্জ করে মিটারের নির্দিষ্ট জায়গায় পাঞ্চ করার মাধ্যমে টাকা রিচার্জ করা যায়।

প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স চেক করা:

কোম্পানির নামমিটার টাইপফেজব্যালেন্স চেক করার উপায়
Hexing Electrical Company. Ltd.কিপ্যাড টাইপসিঙ্গেল ফেজ801 ডায়াল করে এন্টার (লাল বোতাম) চাপতে হবে।
থ্রি ফেজ
স্মার্ট কার্ড টাইপসিঙ্গেল ফেজC.51.0 চ্যানেলে ব্যালেন্স দেখাবে।
থ্রি ফেজ
Shenzen Inhemeter Co. Ltd.স্মার্ট কার্ড টাইপসিঙ্গেল ফেজকোড 000
থ্রি ফেজউপর-নিচ স্ক্রল বোতামের সাহায্যে C.50.1 কোডে গিয়ে ব্যালেন্স দেখা যাবে।
TSS Digital Meter Plant, TSS.স্মার্ট কার্ড টাইপসিঙ্গেল ফেজস্ক্রল বোতাম চেপে চেপে 5 নাম্বার লেভেলে ব্যালেন্স দেখা যাবে।
থ্রি ফেজ
Wasion Groupস্মার্ট কার্ড টাইপসিঙ্গেল ফেজচ্যানেল/পুশ বাটনটি দুইবার চেপে 02 নাম্বার চ্যানেলে গিয়ে ব্যালেন্স জানতে পারবেন।
থ্রি ফেজচ্যানেল/পুশ বাটনটি তিনবার চেপে 003 নাম্বার চ্যানেলে গিয়ে ব্যালেন্স জানতে পারবেন।

প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করার পদ্ধতি:

কিপ্যাড টাইপ মিটার রিচার্জ করার ক্ষেত্রে মিটার নাম্বারের প্রয়োজন হবে। মিটার নাম্বার জানা না থাকলে, সংশ্লিষ্ট মিটারে ৮০৪ ডায়াল করে লাল বোতামটি চাপলে মিটার নাম্বার দেখাবে। এছাড়া গত রিচার্জের টোকেন গুলোতেও মিটার নাম্বার পাওয়া যাবে। বিদ্যুৎ অফিস, ভেন্ডিং স্টেশন কিংবা রিচার্জ সেন্টারে গিয়ে মিটার নাম্বার দিয়ে কত টাকা রিচার্জ করতে চাই তা বলতে হবে। তখন তারা ২০ ডিজিটের পিন সম্বলিত একটি টোকেন দিবে। এখন মিটারে ঐ বিশ ডিজিটের পিনটি ডায়াল করে লাল বোতামে চাপলে রিচার্জ সম্পন্ন হবে এবং মিটারে রিচার্জের পরিমাণ দেখা যাবে।

বিকাশ, রকেট ইত্যাদির মাধ্যমেও রিচার্জ করা যায়। এক্ষেত্রে এসএমএসের মাধ্যমে ২০ ডিজিটের পিনটি জানিয়ে দেবে। তবে সেক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হবে।

স্মার্ট কার্ড টাইপ মিটারের ক্ষেত্রে কার্ডটি রিচার্জ সেন্টারে নিয়ে গিয়ে রিচার্জ করে আনতে হবে। তারপর স্মার্ট কার্ডটি মিটারের নির্দিষ্ট জায়গায় পাঞ্চ করে রিচার্জ সম্পন্ন করতে হবে।

প্রয়োজনীয় কোডসমূহ:

Hexing Electrical Co., Ltd. কর্তৃক সরবরাহকৃত ‘কিপ্যাড টাইপ’ প্রিপেইড মিটারে কোনকিছু জানতে হলে নিচের কোডগুলো ডায়াল করে এন্টার বোতাম অর্থাৎ লাল বোতামটি চাপতে হবে। বিস্তারিত তালিকা পেতে “ডিজিটাল প্রিপেইড মিটারের কোডসমূহ” দেখতে পারেন।

ডায়াল কোড:যা হবে / যা জানা যাবে
যে কোনো কোড:সংকেত (Alarm) বন্ধ করা
801:বর্তমান ব্যালেন্সের পরিমাণ (টাকা)
804:মিটারের সিরিয়াল নাম্বার
810:ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের পরিমাণ
811:ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স চালু করা
812:সংকেত (Alarm) বন্ধ করা
815:সর্বশেষ রিচার্জের তারিখ
816:সর্বশেষ রিচার্জের সময়
817:সর্বশেষ রিচার্জের পরিমাণ
830:সর্বশেষ রিচার্জের টোকেন নাম্বার
868:মিটারটি চালু বা বন্ধ হবে।
869:সংযুক্ত লোড। অর্থাৎ সর্বোচ্চ অনুমোদিত লোড (কিলোওয়াট)

কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়:

বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে রাখা ভালো।

  1. বিদ্যুতের ওভারলোডের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেমন, এক কিলোওয়াট মিটারের ক্ষেত্রে লাইট, ফ্যান, ফ্রিজ ইত্যাদি সব ইলেকট্রিক সরঞ্জাম মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক কিলোওয়াটের অর্থাৎ ১০০০ (এক হাজার) ওয়াটের লোড ব্যবহার করা যাবে। এক কিলোওয়াটের বেশি লোডের কোনো যন্ত্রপাতি (যেমন ইস্ত্রি, হিটার) ইত্যাদি ব্যবহার করলে অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও এসব বেশি লোডের যন্ত্রপাতির ব্যবহার চালিয়ে গেলে বিদ্যুত যাওয়া-আসা করবে। আমাদের যাদের বেশি লোডের যন্ত্রপাতি নিয়মিতভাবে ব্যবহার করতে হয় তারা বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে মিটারের সংযুক্ত লোডের পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারি। তখন বেশি লোডের কারণে বিদ্যুতের যাওয়া-আসার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  2. মিটারে টাকার পরিমাণ কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এলে মিটারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত (Alarm) দিবে। এই পর্যায়ে টাকা শূন্য হয়ে গেলে মিটার তথা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সাপ্তাহিক বা অন্যান্য ছুটির দিনে মিটার বন্ধ হবে না। টাকা একেবারে শেষ হয়ে গেলেও ঐ দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত মিটার চালু থাকবে। এই সময়ের মধ্যে মিটার রিচার্জ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।