অক্ষর
- অক্ষরে অক্ষরে – বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম না করে, হুবহু
- ক-অক্ষর গোমাংস – অশিক্ষিত ব্যক্তি, বর্ণপরিচয়হীন
- রক্তের অক্ষরে লেখা – রক্তের বিনিময়ে কোনো কিছু অর্জনের কাহিনি, রক্ত দিয়ে লেখা
অন্ত, শেষ, ইতি
- অনন্তযাত্রা – অন্তহী যাত্রা, মহাযাত্রা, মৃত্যু
- অন্তরটিপুনি – অগোচরে অন্যের হৃদয়ে গোপনে আঘাতদান। গোপন ব্যথা। মর্মপীড়াদায়ক
- অন্তিম অবস্থা – মুমূর্ষু অবস্থা, শেষ দশা
- অন্তিমকাল – মৃত্যুকাল, শেষ সময়
- অন্তিমদশা – মুমূর্ষু অবস্থা, শেষ দশা
- অন্তিমশয্যা – মৃত্যুশয্যা, শেষ শয্যা
- অন্তিমশয়ন – যে শয়নে মৃত্যু ঘটে
- অন্তিমসময় – মৃত্যুকাল, শেষ সময়
- ইতি করা – শেষ করা
- খতম করা – হত্যা করা (অন্য অর্থ:- শেষ করা)
- শেষ কথা – চূড়ান্ত করা
- শেষ করা – সমাপ্ত করা। ধ্বংস বা বিকল করা
অন্ধ, কানা:
- অন্ধ হওয়া – পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হওয়া
- অন্ধকে দর্পণ দেখানো – নির্বোধকে জ্ঞান দান
- অন্ধের নড়ি, অন্ধের যষ্ঠি – অসহায়ের সহায়, অক্ষমের অবলম্বন
- অন্ধের হাতি দেখা – অল্প জ্ঞান লাভ করে বিজ্ঞের মতো অভিমত
- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন – যার যে গুণ নেই সে গুণের ভান করা
- তালকানা – কাণ্ডজ্ঞানশূন্য
- কানাকড়ি – অতি তুচ্ছ ও মূল্যহীন। অতি নগণ্য পরিমাণ (শাব্দিক অর্থ:- খুঁতযুক্ত কড়ি, ফুটো পয়সা) (এখানে ‘কানা’ শব্দের অর্থ ফুটো বা ছিদ্র)
অন্ধকার, আঁধার:
- অন্ধকার দেখা – দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হওয়া
- অন্ধকারে ঢিল মারা – আন্দাজে কাজ করা, অনুমান বা আন্দাজের ওপর নির্ভর করে কোনো কিছু করা বা কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা
- অন্ধকারে থাকা – কোনো বিষয় সম্পর্কে অবগত না থাকা
- অন্ধকারে হাতড়ানো – অনুমানের ওপর নির্ভর করে খোঁজা
- আলো-আঁধারি – কিছুটা স্পষ্ট এবং কিছুটা অস্পষ্ট এমন
আওয়াজ, ধ্বনি
- আওয়াজ দেওয়া – সাড়া দেওয়া
- ঢক্কাধ্বনি, ঢক্কানাদ, ঢক্কানিনাদ – উচ্চ ও গর্বিত কণ্ঠে ঘোষণা
- ফাঁকা আওয়াজ – বৃথা আস্ফালন
- বাজখাঁই আওয়াজ – অত্যন্ত কর্কশ ধ্বনি, গম্ভীর গলার আওয়াজ
আকাশ, আসমান:
- আকাশ থেকে পড়া – হঠাৎ কোনো অজানা বিষয় জানতে পেরে অত্যন্ত বিস্মিত হওয়া
- আকাশ ধরা – বৃষ্টি থেমে আসা
- আকাশ ভেঙে পড়া – হঠাৎ মহাবিপদে পড়া
- আকাশ হাতে পাওয়া – দুর্লভ বস্তু লাভের আশ্বাস পাওয়া
- আকাশকুসুম – অলীক কল্পনা, কাল্পনিক বিষয় বা বস্তু
- আকাশপাতাল – প্রচুর, বিশাল
- আকাশে তোলা – অতিরিক্ত প্রশংসা করা
- আকাশের চাঁদ – দুর্লভ বস্তু
- আসমান জমিন তফাত, আসমান জমিন ফারাক – আকাশপাতাল প্রভেদ, দূরতিক্রম্য ব্যবধান
আক্কেল, বুদ্ধি
- আক্কেলগুড়ুম – হতবুদ্ধি, স্তম্ভিত
- আক্কেল দাঁত ওঠা – পাকা বুদ্ধি
- আক্কেলসেলামি – নির্বুদ্ধিতার জন্য প্রদত্ত দণ্ড, অনভিজ্ঞতাজনিত খেসারত
- আক্কেল হওয়া – বিপদে পড়ে শিক্ষা হওয়া
- আক্কেলগুড়ুম – হতবুদ্ধি, স্তম্ভিত
- আক্কেল দাঁত ওঠা – পাকা বুদ্ধি
- আক্কেলসেলামি – নির্বুদ্ধিতার জন্য প্রদত্ত দণ্ড, অনভিজ্ঞতাজনিত খেসারত
- কাঁচা বুদ্ধি – অপরিণত বুদ্ধি
- বুদ্ধির ঢেঁকি – স্থূলবুদ্ধি, নির্বোধ
- মুক্তবুদ্ধি – সংকীর্ণতাবর্জিত ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবসম্পন্ন
আগুন, অগ্নি, অনল:
- অগ্নিপরীক্ষা – কঠিন পরীক্ষা
- অগ্নিপুরুষ – আগুনের মতো তেজস্বী ব্যক্তি
- অগ্নিমন্ত্র – কঠিন শপথ
- অগ্নিমূর্তি – অতিশয় ক্রোধান্বিত
- অগ্নিমূল্য – দুর্মূল্য, মহার্ঘ
- অগ্নিশর্মা – নিরতিশয় ক্রুদ্ধ। ক্ষিপ্ত। কোপনস্বভাব ব্যক্তি
- আগুন করা – আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা
- আগুন তাপানো – আগুনের কাছে বসে হাত-প গরম করা, আগুন পোহানো
- আগুন ধরা – আগুন জ্বলে ওঠা
- আগুন নিয়ে খেলা – গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলা
- আগুন পোহানো, আগুন পোয়ানো – আগুনের কাছে বসে হাত-প গরম করা, আগুন তাপানো
- আগুন লাগানো – অগ্নিসংযোগ করা
- আগুন হওয়া – অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হওয়া
- আগুনে ঘি ঢালা – রাগ বাড়ানো
- কুল কাঠের আগুন – তীব্র জ্বালা
- ঘরে আগুন দেওয়া – সংসারে বিবাদ বাঁধানো
- ছাইচাপা আগুন – সুপ্ত প্রতিভা, গোপন গুণ
- তুষের আগুন / তুষানল – (যা সহজে নেভে না) দীর্ঘস্থায়ী অন্তর্জ্বালা বা দুঃখ
- মনের আগুন – শোক ও দুঃখজনিত মনের তীব্র জ্বালা, অন্তর্দাহ
- মুখে আগুন – মৃত্যু কামনাসূচক তিরস্কার
- তেলে বেগুনে জ্বলা – ক্রোধে অগ্নিশর্মা হওয়া
আদা:
- আদা জল খেয়ে লাগা – প্রাণপণ চেষ্টা করা
- আদায়-কাঁচকলায় – পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন
- আদার ব্যাপারী – ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সামান্য বিষয়ে ব্যস্ত ব্যক্তি
আলো
- আলো করা – আলোকিত করা, উজ্জ্বল করা
- আলো-আঁধারি – কিছুটা স্পষ্ট এবং কিছুটা অস্পষ্ট এমন
- কনেদেখা-আলো, কন্যাসুন্দর-আলো – গোধূলির মৃদু সোনালি আলো, যে আলোতে সবকিছু সুন্দর দেখায়
ইঁদুর
- ইঁদুর কপালে – নিতান্ত মন্দ ভাগ্য
- পর্বতের মূষিক প্রসব – বিপুল উদ্যোগে তুচ্ছ অর্জন
ঋতু
- আষাঢ়ে গল্প – আজগুবি গল্প, অবিশ্বাস্য কাহিনি, গাঁজাখুরি গল্প
- এক মাঘে শীত যায় না – বিপদ একবারই আসে না
- কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ – কারো সুদিন, কারো দুর্দিন
- কেলে কার্তিক – অতি কৃষ্ণকায় ব্যক্তি
- গরম কাল – গ্রীষ্মকাল
- বসন্তের কোকিল – সুদিনের বন্ধু, সুসময়ের বন্ধু
- ভাদ্র মাসের তিল
- শরতের শিশির – সুসময়ের বন্ধু
এক
- অমনি একরকম – ভালোও নয় মন্দও নয় এমন অবস্থা
- এক আধ – অতি অল্পসংখ্যক
- এক আধটা – দুয়েকটি, কিছু সংখ্যক
- এক আধটু – সামান্য পরিমাণ
- এক আধবার – দুয়েকবার, কখনো কখনো
- এক কথা – যে কথার নড়চড় হয় না, অপরিবর্তনীয় বাক্য
- এক কথার মানুষ – দৃঢ়সংকল্প ব্যক্তি
- এক ক্ষুরে মাথা মুড়ানো – একই স্বভাবের
- এক গোয়ালের গরু/ গোরু – (তুচ্ছার্থে) একই দলের লোক
- এক ডাকের পথ – কাছাকাছি
- এক ঢিলে দুই পাখি মারা – এক প্রচেষ্টায় উভয় উদ্দেশ্য সাধন করা
- এক বনে দুই বাঘ – প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী
- এক মাঘে শীত যায় না – বিপদ একবারই আসে না
- এক হাত লওয়া – প্রতিশোধ নেয়া
- একচোখা – পক্ষপাতদুষ্ট
- গাছে না উঠতে এক কাঁদি – কাজে অবতীর্ণ হওয়ামাত্র ফল প্রাপ্তির আশা
- বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়া – ক্ষমতা প্রদর্শন
- সব শেয়ালের এক রা
ওষুধ, ঔষধ
- ওষুধ পড়া – প্রভাব পড়া
- ওষুধে ধরা, ঔষধ ধরা – সক্রিয় হওয়া
- ঔষধ করা – বশ করা
কই মাছ
- উজানের কই – সহজলভ্য
- কই মাছের প্রাণ – যা সহজে মরে না, দীর্ঘজীবী
- কইয়ের তেল দিয়ে কই ভাজা – অন্যের উপর দিয়ে স্বার্থোদ্ধার করা
- ঝাঁকের কই – একই দলের লোক
- যশুরে কই – মাথামোটা ও শীর্ণদেহ ব্যক্তি
কচু:
- কচুকাটা করা – কচুর মতো নির্বিচারে কাটা, নির্মূল করা
- কচুপোড়া – অখাদ্য
- কচুপোড়া খাওয়া – প্রত্যাশা করে বিফল হওয়া
- কচু বনের কালাচাঁদ
কথা, কথাবার্তা, আলাপ, গোপন কথা
- আবোল-তাবোল – অর্থহীন বাক্য, অসংলগ্ন উক্তি। প্রলাপ
- ইতর কথা – অভদ্রজনোচিত কথা
- উলটা কথা – বিপরীত কথা
- এক কথা – যে কথার নড়চড় হয় না, অপরিবর্তনীয় বাক্য
- এক কথার মানুষ – দৃঢ়সংকল্প ব্যক্তি
- কথা কাটা – যুক্তি দিয়ে কোনো মত খণ্ডন করা
- কথা কাটাকাটি – বাদানুবাদ
- কথা কাটাকাটি করা – বাদ প্রতিবাদ করা
- কথা চালা – এক কান থেকে অন্য কানে সংবাদ রটনা করা
- কথা চালাচালি – কথা বা গুজব রটনা
- কথা দিয়ে কথা নেয়া – কৌশলে মনের কথা বের করা
- কথা দেওয়া – প্রতিশ্রতি দেওয়া, অঙ্গীকার করা
- কথা পাড়া – প্রসঙ্গ উত্থাপন করা
- কথা ফেলা – কথা আগ্রাহ্য করা
- কথা ফোটা – বাক্স্ফুরণ হওয়া
- কথা বাড়ানো – তর্কবিতর্ক প্রলম্বিত করা, সামান্য বিষয়কে দীর্ঘায়িত করা
- কথা শোনা – কথা মান্য করা
- কথা সরা – বাক্স্ফূর্তি হওয়া
- কথায় চিড়া ভেজা – ফাঁকা আওয়াজে কাজ আদায়
- কথার কথা – গুরুত্বহীন কথা
- কথার তুবড়ি – অনর্গল কথার তোড়
- কানকথা – কানে কানে বলা কথা, গোপন মন্ত্রণা
- খাটো কথা – সামান্য কথা। অনুচ্চস্বরের কথা
- খুচরা কথা – বাজে কথা, অবান্তর কথা। অল্প জরুরি কথা
- খেজুরে আলাপ – অবান্তর কথাবার্তা, অকাজের কথা
- গালগল্প – মনগড়া কথা, বানানো গল্প বা বর্ণনা
- ঘরের কথা – পারিবারিক কথা
- চিবিয়ে কথা বলা – মুখ অল্প ফাঁক করে কথা বলা। বক্তব্য স্পষ্ট না করে কথা বলা
- চোখা কথা – তীব্র বাক্য, কটু কথা
- চোখে চোখে কথা – চোখের ইশারায় পরস্পর ভাববিনিময়
- ঠ্যালামারা কথা – বক্রোক্তি
- পেটের কথা – মনের গোপন কথা
- শেষ কথা – চূড়ান্ত করা
- শোনা কথা – কেবল লোকমুখে শ্রুত কিন্তু তার সত্যাসত্য জানা নেই এমন কথা
- সাতকথা – নানা কথা
- সাদাকথা – সরল এবং স্পষ্ট কথা
কথা সংক্রান্ত আরও কয়েকটি বাগধারা:
- আগড়-বাগড় – বেদরকারি জিনিসপত্র। অপ্রাসঙ্গিক কথা
- আগড়ম-বাগড়ম – অর্থহীন ও অসংলগ্ন কথা
- আগডুম-বাগডুম – অর্থহীন ও অসংলগ্ন কথা (মূল্য অর্থ: অগ্রবর্তী ও পার্শ্ববর্তী ঘোড়সওয়ার ডোমসৈন্য)
- খই ফুটা, খই ফোটা – (ধান ভাজার সময় খই ফোটার মতো) মুখ থেকে অনর্গল কথা নিঃসৃত হওয়া
- গলা বসা – (ক্রমাগত জোরে কথা বলা বা ঠান্ডা লাগার ফলে) গলার স্বর বিকৃত হওয়া
- গা-জুরি করা – গায়ের জোরে কথা বলা, অন্যায় কথা বলা
- চোয়াল ধরা – মাড়ি আটকে যাওয়ার কারণে কথা বলতে না পারা
- জাবর কাটা – বারবার একই কথা বলা, রোমন্থন করা
- ঢাক পেটা/পেটানো – কোনো কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা
- ঢাকঢাক গুড়গুড় – কোনো কথা চেপে রাখার চেষ্টা। গোপন করার প্রবণতা
- ধান ভানতে শিবের গীত – অপ্রাসঙ্গিক কথার অবতারণা
- বিন্দেদূতী – যে পরস্পরের মধ্যে কথা চলাচল করে
- মুখ চলা – অনর্গল কথা বলা। বিরামহীনভাবে খাওয়া। তিরস্কার করা
- মুখ ফোটা – কথা বলা
- মুখ সামলানো – সতর্ক হয়ে কথা বলা
- মুখসর্বস্ব – কাজের চেয়ে কথা বলায় পটু এমন, বাক্পটু
- রা করা – কথা বলা, শব্দ করা
- রাজা-উজির মারা – বড়ো বড়ো কথা বলে গর্ব প্রকাশ করা, নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করা
- সুর বদলানো – কথার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া
- হাঁড়ি ভাঙা – গোপন কথা প্রকাশ করা (হাটে হাঁড়ি ভাঙা)
- হাটে হাঁড়ি ভাঙা – গোপন কথা প্রকাশ করা (হাঁড়ি ভাঙা ভুক্তিতে রয়েছে)
কপাল, ললাট:
- কপাল চাপড়ানো – ভাগ্যকে দোষারোপ করে দুঃখ প্রকাশ করা, নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনা করা
- কপাল ঠোকা – মাথা ঠোকা
- কপাল পোড়়া – সৌভাগ্য নষ্ট হওয়া, দুর্ভাগ্যজনক কিছু ঘটা। হতভাগ্য
- কপাল ফাঁটা – অদৃষ্ট মন্দ হওয়া
- কপাল ফেরা – অবস্থার উন্নতি হওয়া, সৌভাগ্যের সূচনা হওয়া, সৌভাগ্য লাভ
- কপাল ভাঙা – দুর্ভাগ্যের কবলে পড়া
- কপালগুণে গোপাল ঠাকুর – অযোগ্যের ভাগ্যগুণে বড় হওয়া
- কপালজোর – ভাগ্যের আনুকূল্য
- কপালের লিখন, ললাটলিখন – ভাগ্যলিপি, অদৃষ্টলিপি
- আটকপালে, আটকপালিয়া – অভাগা, হতভাগ্য, পোড়াকপালে
- ইঁদুর কপালে – নিতান্ত মন্দ ভাগ্য
- খণ্ডকপাল – ভাঙা কপাল, মন্দ ভাগ্য
- খণ্ডকপালে – দুর্ভাগা
- চাঁদকপালি, চাঁদকপালে – ভাগ্যবান
- চোখ কপালে তোলা – বিস্মিত হওয়া
- ছাই কপালে – ভাগ্যহীন, দুর্ভাগা
- ললাটের লিখন / ললাটলিখন – ভাগ্যলিপি, অদৃষ্টলিপি
কবর, সমাধি
- কবর দেওয়া – বিসর্জন করা, সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা (শাব্দিক অর্থ:- কবরস্থ করা, দাফন করা)
- নির্বিকল্প সমাধি – বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্যানমগ্নতা
করাত
- করাতের দাঁত – উভয়সংকট
- শাঁখের করাত – যা থেকে সহজে নিস্তার পাওয়া যায় না, উভয়সংকট (শঙ্খ কাটার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ঘূর্ণ্যায়মান করাত যার দাঁতগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত যে দুই দিকে ঘুরিয়েই কাটা যায়)
কলম
- কলমপেষা – (কলমের দ্বারা লেখা সংক্রান্ত পেশা) লেখক। কেরানির পেশা
- কাগজে কলমে – লিখিতভাবে
- হাতেকলমে – নিজ হাতে বা প্রত্যক্ষভাবে
কলা, কলাগাছ:
- অষ্টরম্ভা – কাঁচকলা, ফাঁকি, অলীক বস্তু, ঘোড়ার ডিম (রম্ভা = কলা, কলাগাছ)
- আঙুল ফুলে কলাগাছ – হঠাৎ ধনী হওয়া
- আদায়-কাঁচকলায় – পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন
- কলা দেখানো – প্রতারণা করা, ফাঁকি দেওয়া। তোয়াক্কা না করা
- কাঁচকলা – কিছুই না, লবডঙ্কা
- দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা – শত্রুকে সযত্নে লালনপালন করা
- রথ দেখা ও কলা বেচা – একই যাত্রায় একাধিক উদ্দেশ্যসিদ্ধি, এক ঢিলে দুই পাখি মারা (মেলায় গিয়ে একইসঙ্গে রথদর্শন করে পুণ্য অর্জন এবং কলা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন)
- ষোলোকলা – সম্পূর্ণভাবে, পুরোপুরি
- গাছে না উঠতে এক কাঁদি – কাজে অবতীর্ণ হওয়ামাত্র ফল প্রাপ্তির আশা
কাঁচা
- আদায়-কাঁচকলায় – পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন
- কাঁচকলা – কিছুই না, লবডঙ্কা
- কাঁচা কাজ – অপটু হাতের কাজ। বোকামি
- কাঁচা ঘুম – অপূর্ণ ঘুম, ঘুমের ঘোর কাটেনি এমন অবস্থা
- কাঁচা চুল – পাকেনি এমন চুল, কালো চুল
- কাঁচা টাকা – বিনা শ্রমে অর্জিত টাকা
- কাঁচা ধানে মই দেয়া – তৈরি জিনিস নষ্ট করা
- কাঁচা পয়সা – নগদ উপার্জন
- কাঁচা বয়স – অপরিণত বয়স, অল্পবয়স
- কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা – অল্প বয়সে বিগড়ানো, অল্প বয়সেই স্বভাব নষ্ট হওয়া
- কাঁচা বুদ্ধি – অপরিণত বুদ্ধি
- কাঁচা রসিদ – অস্থায়ী প্রাপ্তিস্বীকারপত্র
- কাঁচা লেখা – নিম্নমানের রচনা
- কাঁচা হাত – অপক্ব
কাঁটা:
- কাঁটা করা – ওজন করা
- কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা – ব্যথার উপর ব্যথা দেয়া
- কাঁটা তোলা – শত্রু দমন করা
- কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা – শত্রু দ্বারা শত্রু বিনাশ
- কাঁটা দেওয়া – ভয়ে রোমাঞ্চিত বোধ করা, রোমাঞ্চিত বোধ করার ফলে গায়ের লোম খাড়া হওয়া
- কাঁটা হওয়া – ভয়ে সংকুচিত হওয়া, শিউরে ওঠা
- কাঁটায় কাঁটায় – যথাসময়ে, ঠিক সময়ে
- কাঁটার জ্বালা – অসহ্য দুঃখ
- গায়ে কাঁটা দেওয়া – রোমাঞ্চের উদ্রেক হওয়া। ভয়ে শিউরে ওঠা
- পথে কাঁটা দেওয়া – পথে বাধা সৃষ্টি করা
- পথের কাঁটা – এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা
কাঁঠাল
- কাঁঠালের আমসত্ত্ব – অসম্ভব বস্তু, অসম্ভব ব্যাপার
- কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো – অসম্ভবকে সম্ভব করা
- গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল – প্রাপ্তির পূর্বেই ভোগের আয়োজন
- পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা – অন্যের টাকায় বাহাদুরি, পরকে কষ্ট দিয়ে নিজের স্বার্থোদ্ধার
- মাথায় কাঁঠাল ভাঙা – ফাঁকি দিয়ে সুবিধা আদায় করা
কাঁদা, কান্না, অশ্রু
- অরণ্যে রোদন – নিষ্ফল আবেদন, বিফল প্রার্থনা। বৃথা চেষ্টা
- কুম্ভীরাশ্রু – মায়াকান্না, কপট সহানুভূতি
- চোখ ছলছল করা – অশ্রুসিক্ত হওয়া
- নাকিকান্না – মায়াকান্না, কৃত্রিম কান্না
- নাকে কান্না – নাকি সুরে কান্না। মায়াকান্না
- নাকে কাঁদা – নাকি সুরে কাঁদা
- বোবাকান্না – প্রকাশ করা যায় না এমন কান্না, চাপা কান্না
- মায়াকান্না – লোকদেখানো কান্না, কান্নার ভান, কপট কান্না
কাক:
- কাকতালীয় – পরস্পর সম্বন্ধহীন দুটি ঘটনা একত্রে ঘটেছে এমন
- কাকতালীয় ব্যাপার – কার্যকারণহীন ঘটনা
- কাকনিদ্রা, কাকতন্দ্রা – (কাকের ঘুমের মতো) সতর্ক ও অগভীর ঘুম, কপট ঘুম
- কাকভূশণ্ডি – বয়োবৃদ্ধ অভিজ্ঞ ব্যক্তি। ভূশণ্ডি কাকের মতো দীর্ঘজীবী
- কাকভোর – খুব সকাল
- কাকস্নান – (কাকের মতো কেবল মাথা ভিজিয়ে) অল্প জলে স্নান
- ঝড়়ো কাক – দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি
- তীর্থের কাক, তীর্থকাক, তীর্থবায়স – অনুগ্রহের জন্য প্রতীক্ষমাণ ব্যক্তি, সাগ্রহে প্রতীক্ষাকারী
- দাঁড়কাকের ময়ূরপুচ্ছ – ছোটো হয়ে বড়োদের অনুকরণের চেস্টা। ভণ্ডামির চিহ্ন
- ভূশণ্ডির কাক – দীর্ঘজীবী
কাগজ
- কাগজে কলমে – লিখিতভাবে
- কাগুজে – কেবল কাগজেই আছে কিন্তু বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন (কাগুজে বাঘ)
- কোম্পানির কাগজ – শেয়ার (share)
- পত্রমুদ্রা – কাগজের মুদ্রা, নোট
কাজ, কর্ম
- কাঁচা কাজ – অপটু হাতের কাজ। বোকামি
- কাজ দেওয়া – দায়িত্ব প্রদান করা
- কাজ দেখা – কাজ পরিচালনা করা। চাকরি খোঁজা
- কাজ দেখানো – সর্বদা কর্মব্যস্ততার ভান করা
- কাজ বাগানো – উদ্দেশ্য সিদ্ধি হওয়া
- কাজ হওয়া – উদ্দেশ্য সিদ্ধি হওয়া
- খুচরা কাজ – ছোটোখাটো কাজ, সাধারণ কাজ
- অকর্মার ধাড়ি – নিতান্ত অলস ব্যক্তি, যে ব্যক্তি আলস্যহেতু কাজ পণ্ড করে
- নিষ্কর্মার ঢেঁকি – অত্যন্ত অলস ব্যক্তি
- বাস্তুকর্ম – গৃহনির্মাণের কাজ
- বেগার খাটা/ঠেলা – বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা
কাঠ
- আমড়া কাঠের ঢেঁকি – অপদার্থ
- কড়ি গোনা – কর্মহীন অবসর যাপন করা (শাব্দিক অর্থ:- কোনো কাজ না থাকায় শুয়ে শুয়ে ছাদের কড়িকাঠ গুনে সময় কাটানো)
- কাঠের পুতুল – নির্জীব, অসার
- কাষ্ঠহাসি – কৃত্রিম হাসি, শুকনো হাসি
- কুল কাঠের আগুন – তীব্র জ্বালা
- চৌকাঠ না মাড়ানো – সম্পর্ক ছিন্ন করা
- ধান গাছের তক্তা – অস্তিত্ব নেই এমন বস্তু, অলীকবস্তু
কাঠি
- কলকাঠি নাড়া – (সচরাচর স্বার্থসিদ্ধি বা অসৎ উদ্দেশ্যে) আড়াল থেকে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা
- ঢাকে কাঠি দেওয়া – ব্যাপকভাবে প্রচার করা
- ঢাকে কাঠি পড়া – সূচনা হওয়া
- ঢাকের কাঠি – নিত্যসঙ্গী, মোসাহেব, তোষামুদে, লেজুরবৃত্তি
- সোনার কাঠি রূপার কাঠি – বাঁচা-মরার বস্তু
কান, কর্ণ:
- কান খাড়়া করা – একাগ্র হয়ে শোনার চেষ্টা করা, মনোযোগী হওয়া
- কান দেওয়া – কর্ণপাত করা, মনঃসংযোগ করা
- কান পাতা – শোনার জন্য উদ্গ্রীব হওয়া। গোপনে শোনা, আড়ি পাতা
- কান ভারী করা – কুপরামর্শ দেওয়া
- কান মলা – অপমানিত করা, অপদস্থ করা (শাব্দিক অর্থ:- কর্ণ মর্দন করা)
- কানকথা – কানে কানে বলা কথা, গোপন মন্ত্রণা
- কানকাটা – নির্লজ্জ, বেহায়া
- কানপাতলা – শোনাকথায় প্রভাবিত হয় এমন
- কানফাটা – কানের পর্দা ফাটানোর মতো উচ্চ আওয়াজবিশিষ্ট
- কানভাঙানি – অন্যের সম্পর্কে কুপরামর্শ দান
- কানভাঙানো – কুমন্ত্রণা দেওয়া, গোপনে কারো কাছে অন্যের বিরুদ্ধে বলে দুজনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা
- কানে কানে – চুপিচুপি, গোপনে
- কানে খাটো – কানে কম শুনতে পায় এমন ব্যক্তি
- কানে তুলো দেয়া – ভ্রুক্ষেপ না করা
- কানে তোলা – কোনো কথা উত্থাপন করা
- কানে লাগা – শ্রুতিকটু ঠেকা
- দুকান কাটা – নির্লজ্জ, বেহায়া
- নজর দেওয়া – খেয়াল রাখা। ঈর্ষাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানো
- নজর লাগা – (লোকবিশ্বাসমতে) কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি ঈর্ষাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর ফলে ক্ষতি হওয়া
- নাককান কাটা – নির্লজ্জ, বেহায়া
- নাককান মলা – দ্বিতীয়বার একই ভুল বা অপরাধ না করার প্রতিজ্ঞা করা
- ঊর্ধ্বকর্ণ – উৎকর্ণ
- কুম্ভকর্ণের ঘুম/নিদ্রা – যে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা কঠিন, দীর্ঘদিনের আলস্য
- চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন – নিঃসন্দেহ হওয়া
কালি
- কুলে কালি দেয়া – বংশে কলঙ্ক আনা
- গালে চুনকালি – সামাজিক অন্যায়ের জন্য হেয় প্রতিপন্নকরণ
- চুনকালি দেওয়া – কলঙ্ক দেয়া
- হাড় কালি হওয়া – অত্যন্ত দুঃখকষ্ট ভোগ করা। অতিরিক্ত পরিশ্রমে নির্জীব হয়ে পড়া
কিল
- কিল খেয়ে কিল চুরি – অপমান সয়ে চুপ থাকা
- কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো – অসম্ভবকে সম্ভব করা
- তাল পড়া – পিঠে কিল পড়া
- পাথরে পাঁচ কিল – অত্যন্ত সুদিন, সুখের সময়
- সুখে থাকতে ভূতে কিলায় – স্বেচ্ছায় দুঃখ বরণকারী
কুমড়া
- অকালকুষ্মাণ্ড – মূর্খ, অপদার্থ, অকর্মা, অকর্মণ্য (শাব্দিক আর্থ:- অকালে জাত কুমড়ো)
- দা-কুমড়া সম্পর্ক – শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক
কুমির:
- কুম্ভীরাশ্রু – মায়াকান্না, কপট সহানুভূতি
- খাল কেটে কুমির আনা – নিজ দোষে বিপদে পড়া
- ঘরের ঢেঁকি কুমির – বলিষ্ঠ ও ভোজনপটু অথচ অলস
- জলে কুমির ডাঙায় বাঘ – উভয়সংকট
- টাকার কুমির – বিত্তশালী ব্যক্তি
কূল, অকূল
- অকূলপাথার – ভীষণ বিপদ, মহাসংকট (শাব্দিক অর্থ: অসীম সমুদ্র)
- অকূলে কূল পাওয়া – মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া
- অকূলে ভাসা – গভীর সংকটে দিশাহারা হওয়া
- অকূলের কূল – যে ব্যক্তি বিপদে উদ্ধার করে
- কূল করা – গতি করা
খবর
- উটকো খবর – উড়ো খবর, ভিত্তিহীন সংবাদ
- খবরদারি – তত্ত্বাবধান
- খবর রাখা – খোঁজ রাখা, অবহিত থাকা
- খবর নেওয়া/ লওয়া – তত্ত্বাবধান করা। সংবাদ জানা, খোঁজ নেওয়া
- খবর হওয়া – কোনো তথ্য বা ঘটনা প্রকাশ পাওয়া। সাড়া পড়ে যাওয়া
- গরম খবর – সদ্যপাওয়া সংবাদ, টাটকা খবর
- হাঁড়ির খবর – ভেতরের খবর
খরচ
- খুচরা খরচ – অল্প খরচ। বিবিধ খরচ
- ত-খরচ – আনুষঙ্গিক বিবিধ খরচ। বজে খরচ
- পানি খরচ – জলশৌচ
- হাতখরচ – বিবিধ ব্যক্তিগত ব্যয়
খাটো
- কানে খাটো – কানে কম শুনতে পায় এমন ব্যক্তি
- খাটো কথা – সামান্য কথা। অনুচ্চস্বরের কথা
- খাটো করা – তুচ্ছ বা হেয় করা, অপমানিত করা
- খাটো দৃষ্টি – কৃপণতা
- খাটো হওয়া – অপমানিত বোধ করা, অপদস্থ হওয়া
- মাথায় খাটো – বেঁটে, খর্বাকৃতি
- বামন হয়ে চাঁদে হাত – অসম্ভব কিছু পাওয়ার চেষ্টা (বামন = খুব বেঁটে মানুষ)
খাতা, বই, পুথি
- বইয়ের পোকা, বইপোকা – সারাক্ষণ বই পড়া যার নেশা, পড়ুয়া
- কেতাবি বিদ্যা – বাস্তবতাবর্জিত কেবল বই পড়ে অর্জিত বিদ্যা, পুথিগত বিদ্যা
- পুথি বাড়ানো – অনাবশ্যক বিবরণ দিয়ে প্রলম্বিত করা
- পুথিগত বিদ্যা – যে বিদ্যা কেবল পুথিতেই সীমাবদ্ধ
- খাতা খোলা – ব্যাবসায়িক লেনদেনসংক্রান্ত হিসাব শুরু করা
- খাতা লেখা – দৈনিক আয়ব্যয় বা কেনাবেচার বিবরণ খাতায় লিপিবদ্ধ করা
- চিত্রগুপ্তের খাতা – যে খাতায় সবকিছু পাওয়া যায়
খুচরা
- খুচরা কথা – বাজে কথা, অবান্তর কথা। অল্প জরুরি কথা
- খুচরা কাজ – ছোটোখাটো কাজ, সাধারণ কাজ
- খুচরা খরচ – অল্প খরচ। বিবিধ খরচ
- খুচরা বিক্রি – অল্প পরিমাণ বিক্রি, ভেঙে ভেঙে বিক্রি
খুন
- খুন চড়া – খুন চাপা, প্রচণ্ড রেগে যাওয়া। হত্যা করার প্রবৃত্তি হওয়া
- খুন চাপা – খুন চড়া, প্রচণ্ড রেগে যাওয়া। হত্যা করার প্রবৃত্তি হওয়া
- মাথায় খুন চাপা – অতিশয় ক্রুদ্ধ হওয়া
- সাতখুন মাপ/মাফ – গুরুতর অপরাধ সত্ত্বেও শাস্তির পরিবর্তে অতিরিক্ত প্রশ্রয়দান
খেজুর
- খেজুরে আলাপ – অবান্তর কথাবার্তা, অকাজের কথা
- গোঁফখেজুরে – অত্যন্ত অলস (গোঁফের ওপরে পড়ে থাকা খেজুরটিও হাতে নিয়ে মুখে পুরতে নারাজ এমন অলস ব্যক্তি)
গঙ্গা
- গঙ্গাপ্রাপ্তি – মৃত্যু (শাব্দিক অর্থ:- গঙ্গানদীর তীরে মৃত্যু)
- গঙ্গাযাত্রী – মুমূর্ষু ব্যক্তি
- ভাগের মা গঙ্গা পায় না – ভাগাভাগির কাজ সিদ্ধ হয় না
- রক্তগঙ্গা করা – ব্যাপক রক্তপাত ও খুনোখুনি করা
গরম
- গরম কাপড় – যে কাপড় পরলে শরীর গরম থাকে, পশমি কাপড়
- গরম কাল – গ্রীষ্মকাল
- গরম খবর – সদ্যপাওয়া সংবাদ, টাটকা খবর
- গরমগরম – সদ্য চুলো থেকে নামানো হয়েছে এমন, টাটকা
- গরম মসলা – দারুচিনি লবঙ্গ এলাচ প্রভৃতি মসলা
- গা গরম – অল্প জ্বর
- টাকার গরম – ধনসম্পদের অহংকার
- বাজার গরম হওয়া – পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়া। বিক্রি বেড়ে যাওয়া। অনর্থক হইচই করা
- মাথাগরম – রাগী, বদমেজাজি
- মাথাগরম করা – উত্তেজিত হওয়া, ক্রুদ্ধ হওয়া। অস্থির হওয়া
- মাথাগরম হওয়া – ক্রোধ সৃষ্টি হওয়া, রাগান্বিত হওয়া। অস্থির হওয়া
- রক্তগরম করা – উত্তেজিত করা বা হওয়া
গন্ধ
- ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা – সামান্য স্বার্থে দুর্নাম অর্জন
- নামগন্ধ – আভাস
- মুখে দুধের গন্ধ
গরু/গোরু, ষাঁড়, বলদ:
- এক গোয়ালের গোরু – (তুচ্ছার্থে) একই দলের লোক
- ওঝার ব্যাটা বনগোরু – পণ্ডিতের মূর্খ পুত্র
- ক-অক্ষর গোমাংস – অশিক্ষিত ব্যক্তি, বর্ণপরিচয়হীন
- গোকুলের ষাঁড়় – বৃন্দাবনের ষাঁড়ের মতো ঘুরে বেড়ায় এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি, ভবঘুরে
- গোবৈদ্য – হাতুড়ে ডাক্তার। আনাড়ি চিকিৎসক (আক্ষরিক অর্থ পশুচিকিৎসক)
- গোমূর্খ – গোরুর মতো নির্বোধ। অক্ষর পরিচয়হীন
- গোরু খোঁজা
- গোরু মেরে জুতা দান – বড়ো ক্ষতি করে সামান্য পূরণ
- বাঘে গোরুতে এক ঘাটে জল খাওয়া – ক্ষমতা প্রদর্শন
- কলুর বলদ – বলদের মতো নীরবে পরিশ্রম করে এমন চিন্তাশক্তিহীন ব্যক্তি। একটানা খাটুনি
- চিনির বলদ – ভারবাহী কিন্তু ফল লাভের অংশীদার নয়, যে ব্যক্তি অন্যের সুখের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে কিন্তু নিজে সুখ ভোগ করতে পারে না
- ধর্মের ষাঁড়় – স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি, অকর্মণ্য
- ষাঁড়ের গোবর – অকোজো/অকর্মণ্য মানুষ
- ষণ্ডামর্ক – বলিষ্ঠ ও গোঁয়ার প্রকৃতির ব্যক্তি, অতি দুর্বৃত্ত ব্যক্তি
গলা
- গলগ্রহ – অনিচ্ছাসত্ত্বেও যে ব্যক্তির ভরণপোষণের ভার অন্যকে গ্রহণ করতে হয়, পরের উপর বোঝা হয়ে থাকা
- গলা কাটা – প্রবঞ্চনা করা
- গলা চাপা – কণ্ঠস্বর নিচু করা। শ্বাসরোধ করা
- গলা ছাড়া – কণ্ঠস্বর উঁচু করা
- গলা ধরা – আবেগে কণ্ঠরুদ্ধ হওয়া
- গলা বসা – (ক্রমাগত জোরে কথা বলা বা ঠান্ডা লাগার ফলে) গলার স্বর বিকৃত হওয়া
- গলা বাঁচানো – প্রাণ বাঁচানো
- গলা ভাঙা – গলা বসা দ্রষ্টব্য
- গলা সাধা – গানের রেওয়াজ করা
- গলাকাটা দাম – অত্যধিক মূল্য, বেশি দাম
- গলাগলি – অতিশয় আন্তরিকতাপূর্ণ
- গলাজল – গভীর সংকট
- গলাধাক্কা – অর্ধচন্দ্র, অপমান করে বিতাড়ন
- গলাবাজি – চিৎকার, চেঁচামেচি। অসার বক্তৃতা
- গলায় গলায় – অন্যন্ত ঘনিষ্ঠ
- গলায় গলায় ভাব , গলাগলি ভাব – অতিশয় আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক
- গলায় গাঁথা – গলগ্রহ হওয়া, অনভিপ্রেত বোঝা হওয়া
- গলায় দড়ি – ফাঁসি। ধিক্কারসূচক উক্তি
- গলায় লাগা – খাদ্যবস্তু গলায় আটকে দম বন্ধের উপক্রম হওয়া। ওল কচু প্রভৃতি খাওয়ার ফলে গলা চুলকানো
- বড়ো গলা – গর্ব, অহংকার
- বানরের গলায় মুক্তার হার – অপাত্রে উৎকৃষ্ট সামগ্রী দান
গা, শরীর:
- গতর খাটানো – শারীরিক পরিশ্রম করা/করানো
- গা করা – গরজ করা, আগ্রহ প্রকাশ করা। মনোযোগ দেওয়া
- গা কাঁপা – ভীত হওয়া
- গা গতর – সর্বাঙ্গ, সমস্ত দেহ
- গা গরম – অল্প জ্বর
- গা গুলানো – বমির উদ্রেক হওয়া
- গা ঘেঁষা – অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করা। গায়ে পড়ে ভাব জমায় এমন
- গা ছমছম – ভয়ের অনুভূতিসূচক ভাব
- গা জুড়ানো – ক্লান্তি বা জ্বালাযন্ত্রণা দূর হওয়া। স্বস্তি পাওয়া। বমির উদ্রেক হওয়া, গা-গুলানো
- গা জ্বালা করা – ঈর্ষা বা বিরক্তির সৃষ্টি হওয়া
- গা ঢাকা দেওয়া – আত্মগোপন করা, অদৃশ্য হওয়া
- গা তোলা – শয্যাত্যাগ করা
- গা ধোয়া – গোসল করা
- গা-ছাড়া – আগ্রহহীন। ঢিলেঢালা ভাব
- গা-জুরি করা – গায়ের জোরে কথা বলা, অন্যায় কথা বলা
- গা-মোড়া – আড়মোড়া ভাঙা
- গা-সওয়া, গা-সহা – সহ্য হওয়া। অভ্যস্ত হয়ে গেছে এমন
- গায়ে কাঁটা দেওয়া – রোমাঞ্চের উদ্রেক হওয়া। ভয়ে শিউরে ওঠা
- গায়ে দেওয়া – পরিধান করা
- গায়ে পড়া – অযাচিতভাবে আলাপ করা, অনধিকার চর্চা করা
- গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়়ানো – কোনো দায়িত্ব গ্রহণ না করা
- গায়ে মাংস/মাস লাগা – স্বাস্থ্য ভালো হওয়া
- গায়ে মাখা – গ্রাহ্য করা, আমলে নেওয়া
- গায়ে মানে না আপনি মোড়ল – স্বয়ংসিদ্ধ নেতা
- গায়ে সওয়া – অভ্যস্ত হওয়া
- গায়ে সহা – গায়ে সওয়া দ্রষ্টব্য
- গায়ে হাত তোলা – প্রহার করা, মারধর করা
- গায়েপড়া – উপরপড়া
- গায়ের জ্বালা – গাত্রদাহ, ঈর্ষা, হিংসা
- গায়েহলুদ – বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর গায়ে হলুদ লেপনের অনুষ্ঠানবিশেষ
গাধা
- গাধার খাটুনি – শ্রমসাধ্য কাজ। পারিশ্রমিকের তুলনায় অতিরিক্ত খাটুনি
- গাধার পিটুনি – অপরিমিত ও নির্মম প্রহার
- ধোপার গাধা – যে অন্যের জিনিস বহন করে অথচ নিজে ভোগ করতে পারে না
গাল
- গাল ফোলানো – অভিমান করা
- গালগল্প – মনগড়া কথা, বানানো গল্প বা বর্ণনা
- গালে চুনকালি – সামাজিক অন্যায়ের জন্য হেয় প্রতিপন্নকরণ
গোবর
- গোবরগণেশ – ব্যক্তিত্বহীন ও নির্বোধ (গোবরের তৈরি গণেশমূর্তির মতো অকর্মণ্য)
- গোবরে পদ্মফুল – নীচ কুলে মহৎ ব্যক্তি
- ল্যাজেগোবরে করা, লেজেগোবরে করা – অক্ষমতার জন্য বিপর্যস্ত অবস্থায় উপনীত হওয়া, বিতিকিচ্ছিরি অবস্থাযুক্ত
- ষাঁড়়ের গোবর – অকোজো/অকর্মণ্য মানুষ
গোয়াল
- এক গোয়ালের গরু/ গোরু – (তুচ্ছার্থে) একই দলের লোক
- হরিঘোষের গোয়াল – অনেক লোকের কোলাহল
গ্রাম, গাঁ
- গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না – নিজ দেশে গুণীর কদর নেই
- ঠক বাছতে গাঁ উজাড় – ভালো মানুষের অভাব
ঘণ্টা
- ঘণ্টা পড়া – ঘণ্টা পিটিয়ে সময় ঘোষণা করা
- চব্বিশ ঘণ্টা – সারাদিনরাত ধরে, অনবরত
- পাগলা ঘণ্টা – (সচরাচর কারাগারে) বিপদের সংকেতসূচক ঘণ্টাধ্বনি
ঘর
- আলালের ঘরের দুলাল – অতি আদরে নষ্ট পুত্র
- ঘর করা – সংসারধর্ম পালন করা। পত্নীরূপে দায়িত্ব পালন করা
- ঘর কাটা – ছক কাটা
- ঘর খোঁজা – বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র বা পাত্রীর সন্ধান করা
- ঘর গড়া – সংসার করা, বিবাহ করা
- ঘর ঘেঁষা – ঘরকুনো, অসামাজিক
- ঘর জ্বালানো পর ভুলানো – আত্মীয়ের কষ্টদায়ক অথচ অপরের প্রিয়
- ঘর তোলা – ঘর তৈরি করা
- ঘর বসানো – বসতিস্থাপন করা
- ঘর বাঁধা – সংসার পাতা। গৃহনির্মাণ করা, বসতিস্থাপন করা
- ঘর ভাঙা/ভাঙানো – বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো
- ঘরকন্না – সাংসারিক কাজকর্ম
- ঘরকুনো – বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্কশূন্য, অমিশুক, অসামাজিক
- ঘরছাড়া – গৃহত্যাগী, সন্ন্যাসী
- ঘরভেদী বিভীষণ – কপট স্বজন
- ঘরমুখী, ঘরমুখো – গৃহাসক্ত
- ঘরসংসার করা – সংসারধর্ম পালন করা
- ঘরে আগুন দেওয়া – সংসারে বিবাদ বাঁধানো
- ঘরের কথা – পারিবারিক কথা
- ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো
- ঘরের ঢেঁকি কুমির – বলিষ্ঠ ও ভোজনপটু অথচ অলস
- ঘরের লক্ষ্মী – লক্ষ্মীরূপ বধূ বা স্ত্রী
- ঘরের শত্রু বিভীষণ – যে গৃহবিবাদ করে
- তাসের ঘর – অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর
- বরের ঘরে পিসী, কনের ঘরে মাসী – উভয় কুল রক্ষা করে চলা
- শ্রীঘর – জেলখানা, কারাগার
ঘা
- আঁতে ঘা – মনে ব্যথা দেওয়া, মর্মে আঘাত
- কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা – ব্যথার উপর ব্যথা দেয়া
- ঘা করা – ক্ষত সৃষ্টি করা
- ঘা খাওয়া – কষ্ট পাওয়া
- মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা – দুর্গত বা মৃতপ্রায় ব্যক্তির ওপর অত্যাচার
- মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল – ভীষণ বিপদে অস্থির অবস্থা
ঘাড়, গর্দান
- গর্দান যাওয়া – মাথা কাটা যাওয়া
- গর্দান লওয়া – শিরশ্ছেদ করা
- ঘাড়ধাক্কা – অপমান করে বিতাড়ন, গলাধাক্কা, অর্ধচন্দ্র
- ঘাড় নাড়া – ঘাড় নেড়ে সম্মতি বা অসম্মতি প্রকাশ করা
- ঘাড় পাতা – দায়িত্ব গ্রহণ করতে সম্মত হওয়া
- ঘাড় ভাঙা – খরচ করতে বাধ্য করা। অন্যের ওপর জোর খাটিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা
- ঘাড়েগর্দানে – অত্যন্ত স্থূল
ঘাম
- ঘাম ছোটা – ঘাম নিঃসৃত হওয়া
- ঘাম ঝরানো – কায়িক শ্রম করা
- মাথা ঘামানো – কোনো বিষয়ে চিন্তামগ্ন হওয়া
- মাথার ঘাম পায়ে ফেলা – কঠোর দৈহিক পরিশ্রম করা
ঘাস
- ঘাস কাটা – বেকার বসে থাকা
- ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া – মধ্যবর্তীকে অতিক্রম করে কাজ করা
- ঘোড়ার ঘাস কাটা – বাজে কাজ করা, অযথা সময় ব্যয় করা
ঘি
- আগুনে ঘি ঢালা – রাগ বাড়ানো
- পান্তাভাতে ঘি – অপব্যবহার
- ভস্মে ঘি ঢালা – নিষ্ফল কাজ
ঘুঘু
- ঘুঘু চরানো – সর্বনাশ করা, ধ্বংস করা
- ঘুঘু দেখেছ, ফাঁদ দেখোনি – বিপন্ন করার ভীতি প্রদর্শন
- বাস্তুঘুঘু – সহজে বাস্তুচ্যুত করা যায় না এমন ধূর্ত ব্যক্তি, ঘনিষ্ঠ অথচ সর্বনাশা ব্যক্তি
- ভিটায় ঘুঘু চড়ানো – সর্বনাশ করা
ঘুম, নিদ্রা, তন্দ্রা
- অনন্তনিদ্রা – মৃত্যু
- কাঁচা ঘুম – অপূর্ণ ঘুম, ঘুমের ঘোর কাটেনি এমন অবস্থা
- কাকনিদ্রা, কাকতন্দ্রা – (কাকের ঘুমের মতো) সতর্ক ও অগভীর ঘুম, কপট ঘুম
- কুম্ভকর্ণের ঘুম/নিদ্রা – যে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা কঠিন, দীর্ঘদিনের আলস্য
- ঘুম ধরা – নিদ্রালু হওয়া
- ঘুম পাওয়া – নিদ্রালু হওয়া
- নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো – নিশ্চিত থাকা
ঘোড়া:
- গরিবের ঘোড়া রোগ
- ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া – মধ্যবর্তীকে অতিক্রম করে কাজ করা
- ঘোড়ার ঘাস কাটা – বাজে কাজ করা, অযথা সময় ব্যয় করা
- ঘোড়ার ডিম – অলীক বস্তু, অসার বা অসম্ভব বস্তু, কিছুই না
- ঘোড়ারোগ – সাধ্যাতীত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করার প্রবৃত্তি
- রাজঘোটক – চমৎকার মিল
চক্কর
- কুলোপনা চক্কর – সারহীন আড়ম্বর
- চক্কর খাওয়া – মাথা পাক দিয়ে ওঠা
- চক্কর মারা – ঘোরা
- বিষ নেই তার, কুলোপনা চক্কর – অক্ষম ব্যক্তির বৃথা আস্ফালন
চাঁদ, চন্দ্র:
- অমাবস্যার চাঁদ – দুর্লভ বস্তু
- আউলিয়া চাঁদ – যে অল্পেই আকুল হয়
- আকাশের চাঁদ – দুর্লভ বস্তু
- ঈদের চাঁদ – অতি আকাঙ্ক্ষিত বস্তু
- কচু বনের কালাচাঁদ
- চাঁদ হাতে পাওয়া – আশাতীত দুর্লভ বস্তু পাওয়া
- চাঁদকপালি, চাঁদকপালে – ভাগ্যবান
- চাঁদের হাট – প্রিয়জনের সমাগম। আনন্দের প্রাচুর্য
- নদের চাঁদ – সুবেশধারী এবং অলস ও অকর্মণ্য ব্যক্তি, সুন্দর ব্যক্তি অথচ অপদার্থ, অহমিকাপূর্ণ নির্গুণ ব্যক্তি (আক্ষরিক অর্থ:- নদিয়ার চাঁদরূপ গৌরবময় ব্যক্তি)
- বামন হয়ে চাঁদে হাত – অসম্ভব কিছু পাওয়ার চেষ্টা
- লগন চাঁদ
- অচন্দ্রচেতন – যৌন চেতনাশূন্য
- অর্ধচন্দ্র – গলাধাক্কা
- গৌরচন্দ্রিকা – মুখবন্ধ, ভূমিকা। ভণিতা
- মুখচন্দ্র – চাঁদের মতো সুন্দর মুখ
- হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী – নির্বোধের পরামর্শে চলা নির্বোধ ব্যক্তি
চাল (খাওয়ার চাউল)
- কত ধানে কত চাল – টের পাওয়ানো
- চাল কমানো – ব্যয় সংকোচ করা, জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস করা
- চাল না চুলো, ঢেঁকি না কুলো – নিতান্ত নিঃস্ব
- চাল বাড়ানো – জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ানো
- চালচুলাহীন, চালচুলোহীন – আহার-বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই এমন, নিঃস্ব
চাল (কৌশল), চালা (চালনা করা)
- কথা চালা – এক কান থেকে অন্য কানে সংবাদ রটনা করা
- কথা চালাচালি – কথা বা গুজব রটনা
- চাল চালা – ফন্দি খাটানো, কৌশল প্রয়োগ করা
- চালমাত – কার্যোদ্ধার
- চাল মারা – বড়াই করা। ফাঁকি দেওয়া, চালাকি করা
- চালু মাল – ধূর্ত ব্যক্তি
- লম্বা চাল – অতিরিক্ত আড়ম্বর প্রদর্শন
- সরফরাজি চাল – অনাবশ্যক মাতব্বরি
- হাত চালা – চোর ধরার জন্য কল্পিত মন্ত্রবলে হাত চালনা করা
- হাত চালানো – তাড়াতাড়ি করা
চিঠি, পত্র
- উড়োচিঠি – বেনামি পত্র
- পত্র করা – লিখিতভাবে বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করা
- পত্র লেখা – চিঠি লেখা
- পত্রপাঠ – পত্র পড়ামাত্র, অবিলম্বে বা তৎক্ষণাৎ
- পত্রমুদ্রা – কাগজের মুদ্রা, নোট
- পত্রশ্রেষ্ঠ – বেলগাছ
চিনি
- চিনির পুতুল – শ্রমকাতুরে
- চিনির বলদ – ভারবাহী কিন্তু ফল লাভের অংশীদার নয়, যে ব্যক্তি অন্যের সুখের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে কিন্তু নিজে সুখ ভোগ করতে পারে না
চুন
- গালে চুনকালি – সামাজিক অন্যায়ের জন্য হেয় প্রতিপন্নকরণ
- চুনকালি দেওয়া – কলঙ্ক দেয়া
- পান থেকে চুন খসা – যৎসামান্য ত্রুটি হওয়া
- মুখ চুন – মলিন মুখ
চুল
- কাঁচা চুল – পাকেনি এমন চুল, কালো চুল
- কেশাগ্র স্পর্শ করতে না পারা – ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থান করা
- চুল পাকানো – অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা
- চুলাচুলি – কলহবিবাদ
- ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধা – পরকে আপন করার চেষ্টা
চোর, চুরি
- কিল খেয়ে কিল চুরি – অপমান সয়ে চুপ থাকা
- পুকুরচুরি – বড় রকমের চুরি, আগাগোড়া ফাঁকি
- চোরের ওপর বাটপাড়ি – চোরের সঙ্গে প্রতারণা
- বর্ণচোরা – ছদ্মবেশী। নিজের আসল পরিচয় গোপন করে এমন
- বর্ণচোরা আম – কপট ব্যক্তি
- মুখচোরা – অল্প কথা বলে এমন, লাজুক
চোখ, চক্ষু:
- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন – যার যে গুণ নেই সে গুণের ভান করা
- চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন – নিঃসন্দেহ হওয়া
- চক্ষু চড়়কগাছ – বিস্ময়ে চোখ বড়় হওয়া
- চক্ষুদান করা – চুরি করা
- চক্ষুলজ্জা – লোকলজ্জা
- চক্ষুশূল – দেখলে বিরক্তিবোধ হয় এমন ব্যক্তি
- চক্ষুস্থির – অত্যধিক বিস্ময়জনিত হতবুদ্ধিতা
- চক্ষের পুতলি – আদরের ধন
- চশমখোর – চক্ষুলজ্জাহীন (চশম অর্থ হলো চোখ, চক্ষু, আঁখি)
- চোখ ওঠা – চোখের প্রদাহজনিত ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়া
- চোখ ওলটানো – অকৃতজ্ঞতার ভাব প্রকাশ করা
- চোখ কপালে তোলা – বিস্মিত হওয়া
- চোখ খাওয়া – দৃষ্টিশক্তি হারানো
- চোখ খোলা – জেগে ওঠা
- চোখ ঘুরানো/ঘোরানো – রেগে তাকানো
- চোখ ছলছল করা – অশ্রুসিক্ত হওয়া
- চোখ ছানাবড়া – ভয় বা বিস্ময়জনিত চোখের স্ফীতি
- চোখ ঝলসানো – তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে ওঠা। রূপে মুগ্ধ হওয়া
- চোখ ঝাঁ ঝাঁ করা – চোখ ঝলসানো দ্রষ্টব্য
- চোখ টাটানো – চোখে বেদনা অনুভব করা। অন্যের শ্রীবৃদ্ধিতে ঈর্ষান্বিত হওয়া
- চোখ টেপা – চোখ দিয়ে ইঙ্গিত করা
- চোখ ঠারা – চোখ কুঁচকে ইশারা করা
- চোখ দেওয়া – ঈর্ষার দৃষ্টিতে তাকানো। কুনজর দেওয়া
- চোখ নাচা – চোখের পাতা স্পন্দিত হওয়া
- চোখ পড়া – মনোযোগ আকৃষ্ট হওয়া। (অসাধু উদ্দেশ্যে) কোনো কিছুর প্রতি নজর পড়া
- চোখ পাকানো – ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করা, রেগে তাকানো
- চোখ ফোটা – প্রকৃত অবস্থা জানতে পারা
- চোখ বুলানো/বোলানো – মনোযোগ না দিয়ে দ্রুত পড়া
- চোখ বোজা – মৃত্যুবরণ করা। আমলে না আনা
- চোখ মটকানো – চোখ টিপে ইঙ্গিত করা
- চোখ মারা – এক চোখ বন্ধ করে অশালীন ইঙ্গিত করা
- চোখ রাখা – তত্ত্বাবধান করা। সতর্ক থাকা। মনোযোগী হওয়া
- চোখ রাঙানো – রেগে কোনো কিছুর দিকে তাকানো। ভীতি প্রদর্শন করা
- চোখে চোখে কথা – চোখের ইশারায় পরস্পর ভাববিনিময়
- চোখে চোখে রাখা – সতর্ক পাহারায় রাখা
- চোখে ঠুলি দেওয়া – দেখেও না দেখার ভান করা, উদাসীন থাকা
- চোখে ধরা – পছন্দ হওয়া, মনে রেখাপাত করা
- চোখে ধুলো দেওয়া – প্রকৃত তথ্য গোপন করে প্রতারণা করা
- চোখে সরষেফুল দেখা – বিপদে পড়ে দিশেহারা হওয়া
- চোখের দেখা – ক্ষণিকের তরে দেখা
- চোখের নেশা – কেবল চোখে দেখার বাসনা, রূপের মোহ
- চোখের পর্দা, চোখের চামড়়া – চক্ষুলজ্জা (আক্ষরিক অর্থ চোখের পাতা)
- চোখের পলক – নিমেষ, ক্ষণকাল
- চোখের পাতা – চোখের ওপরের চামড়া। লজ্জা
- চোখের বালি – শত্রু, চক্ষুশূল, অপ্রিয় ব্যক্তি
- চোখের ভুল – দেখার ভুল
- চোখের মণি – অত্যন্ত প্রিয় বস্তু
- চোখের মাথা খাওয়া – দৃষ্টিশক্তি হারানো
- একচোখা – পক্ষপাতদুষ্ট
- চারচোখের মিলন – পরস্পরের দৃষ্টিপাত
- দু-চোখের বিষ – অত্যন্ত বিদ্বেষের পাত্র বা বিষয়। শত্রু। চক্ষুশূল
- বাঘের চোখ – দুঃসাধ্য বস্তু
ছয়, ছক্কা, ষষ্ঠ
- ছক্কাপাঞ্জা করা – বড়াই করা। প্রতারণা করা
- নমাসে ছমাসে – বহুদিন পরপর, কদাচিৎ
- নয়ছয় – অপব্যয়, অপচয়। আর্থিক অনিয়ম
- ষষ্ঠীভাগ্য – সন্তানভাগ্য
- ষষ্ঠীর বাহন – বিড়াল
ছাই:
- ছাই কপালে – ভাগ্যহীন, দুর্ভাগা
- ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো – সামান্যের বিশেষ প্রয়োজন
- ছাইচাপা আগুন – সুপ্ত প্রতিভা, গোপন গুণ
- দুর ছাই করা – বিরক্তি প্রকাশ করা
- বাড়া ভাতে ছাই – আশা ভঙ্গ
- ভস্মে ঘি ঢালা – নিষ্ফল কাজ
ছাতা
- ছাতা ধরা – আশ্রয় দেওয়া
- ছাতাধরা – ছত্রাকযুক্ত
- ব্যাঙের ছাতা – ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদবিশেষ, মাশরুম, mushroom
ছুঁচো
- ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা – সামান্য স্বার্থে দুর্নাম অর্জন
- ছুঁচোর কেত্তন – অবিরাম কলহ
- সাপের ছুঁচো গেলা – উভয়সংকটে পড়া
- সাপের ছুঁচো পা দেখা – গর্বে অন্ধ হওয়া
ছেলে, পুত্র, বেটা
- ওঝার ব্যাটা বনগরু – পণ্ডিতের মূর্খ পুত্র
- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন – যার যে গুণ নেই সে গুণের ভান করা
- ছেলেখেলা – অকিঞ্চিৎকর কাজ, সহজসাধ্য কাজ
- ছেলেবেলা – বাল্যকাল, ছোটোবেলা
- ছেলেমানুষি – বালকসুলভ আচরণ
- ছেলের হাতের মোয়া – সহজলভ্য বস্তু
- ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির – অত্যন্ত ধার্মিক
- বাপের বেটা – পিতার যোগ্য পুত্র
- মাছের মায়ের পুত্রশোক – কপট বেদনাবোধ
জল, পানি
- অগাধ জলের মাছ – সুচতুর ব্যক্তি
- অথই জলে পড়া – দিশেহারা হওয়া
- অল্প জলের মাছ – যে ব্যক্তি সামান্য বিদ্যা নিয়ে অধিক পাণ্ডিত্যের ভান করে। যে ব্যক্তি সামান্য সম্পদ নিয়ে গর্ব করে
- আদা জল খেয়ে লাগা – প্রাণপণ চেষ্টা করা
- গভীর জলের মাছ – সুচতুর ব্যক্তি
- গলাজল – গভীর সংকট
- গোড়া কেটে আগায় জল ঢালা – জ্ঞাতসারে ক্ষতি করে পরে সংশোধনের প্রয়াস
- জল করা – ক্রোধ প্রশমিত করা
- জল ভাঙা – সন্তান প্রসবের সময় গর্ভিণীর গর্ভাশয় থেকে পানি বের হওয়া
- জল হওয়া – সহজবোধ্য হওয়া। শান্ত হওয়া
- জলাঞ্জলি দেওয়া – বিসর্জন দেয়া
- জলে কুমির ডাঙায় বাঘ – উভয়সংকট
- ডুবে ডুবে জল খাওয়া – গোপনে কাজ করা
- ধরি মাছ না ছুঁই পানি – কৌশলে কার্যোদ্ধার
- পানি খরচ – জলশৌচ
- পানি ভাঙা – প্রসবের পূর্বে জলীয় স্রাব নিঃসৃত হওয়া
- বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়া – ক্ষমতা প্রদর্শন
- মেঘ না চাইতেই জল – আশাতীত ফল
- হালে পানি পাওয়া – সুবিধা করা, বিপদমুক্ত হওয়া
- স্বখাতসলিল – স্বীয় কৃতকর্মের ফল, নিজ বিপদ ডাকা (সলিল = পানি)
জাত, কুল
- জাত খাওয়া – জাত খোয়ানো। ধর্মচ্যুত করা। সতীত্ব নাশ করা
- জাত খোয়ানো – অন্য ধর্ম বা কুলে বিবাহের কারণে সামাজিক শ্রেণি বা বর্ণ থেকে বিচ্যুত হওয়া
- জাতভাই – একই শ্রেণি বা পেশার মানুষ। স্বজাতীয় বা সমগোত্রীয়
- জাত মারা – জাতিচ্যুত করা। সতীত্বনাশ করা
- জাত যাওয়া – জাতিচ্যুত হওয়া
- জাতশত্রু – আসল শত্রু। আজন্ম শত্রু। অনেক শত্রু জন্মেছে এমন
- জাতে ওঠা – মর্যাদালাভের আশায় কল্পিত অভিজাত সমাজের একজন হয়ে ওঠা
- জাতে তোলা – জাত বা শ্রেণিতে স্থান দেওয়া
- কুল রাখা – কুলাচার রক্ষা করা
- কুলে কালি দেয়া – বংশে কলঙ্ক আনা
- কুলোপনা চক্কর – সারহীন আড়ম্বর
- দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ – খারাপ বংশে ভালো মানুষ
- বিষ নেই তার, কুলোপনা চক্কর – অক্ষম ব্যক্তির বৃথা আস্ফালন
- শ্যাম রাখি না কুল রাখি – উভয়সংকট
জুতা
- গোরু মেরে জুতা দান – বড়ো ক্ষতি করে সামান্য পূরণ
- জুতা খাওয়া – অপমানিত হওয়া
টাকা, পয়সা, মুদ্রা
- কাঁচা টাকা – বিনা শ্রমে অর্জিত টাকা
- টাকা উড়ানো/ওড়ানো – অর্থ অপব্যয় করা
- টাকা করা – টাকা উপার্জন করা। টাকা জমানো
- টাকা খাওয়া – ঘুস খাওয়া
- টাকা তোলা – চাঁদা তোলা
- টাকা ভাঙানো – খুচরা করা
- টাকা মারা – অন্যের টাকা আত্মসাৎ করা
- টাকার আন্ডিল – বিপুল ধনের অধিকারী ব্যক্তি
- টাকার কুমির – বিত্তশালী ব্যক্তি
- টাকার গরম – ধনসম্পদের অহংকার
- টাকার শ্রাদ্ধ – অর্থের অপচয়
- লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন – চাওয়ামাত্র যার কাছে টাকা পাওয়া যায়, বেহিসাবি খরচের জোগানদার
- কাঁচা পয়সা – নগদ উপার্জন
- কানাকড়ি – অতি তুচ্ছ ও মূল্যহীন। অতি নগণ্য পরিমাণ (শাব্দিক অর্থ:- খুঁতযুক্ত কড়ি, ফুটো পয়সা)
- গাঁটের পয়সা – পকেটের টাকা। জমানো টাকা
- পকেট খালি – পকেটে টাকাপয়সা নেই এমন
- ফুটো পয়সার লড়াই – সামান্য বিষয় নিয়ে বিবাদ (ফুটো পয়সা = মাঝখানে ছিদ্রযুক্ত অধুনালুপ্ত তামার পয়সাবিশেষ)
- পত্রমুদ্রা – কাগজের মুদ্রা, নোট
ঠোঁট
- ঠোঁট ওলটানো – অবজ্ঞা করা, উপেক্ষা করা
- ঠোঁট ফোলানো – অভিমান করা
- ঠোঁটকাটা – স্পষ্টভাষী। নির্লজ্জ
ডাক্তার
- কেবলা হাকিম – অনভিজ্ঞ
- গোবৈদ্য – হাতুড়ে ডাক্তার। আনাড়ি চিকিৎসক (আক্ষরিক অর্থ পশুচিকিৎসক)
- নাড়িটেপা ডাক্তার – হাতুড়ে চিকিৎসক
ডিম, আন্ডা
- গন্ডায় আন্ডা দেয়া – ফাঁকি দেয়া
- ঘোড়ার ডিম – অলীক বস্তু, অসার বা অসম্ভব বস্তু, কিছুই না
- ডিম পাড়া – কালক্ষেপণ করা
- ডিমে তা দেওয়া – অলসভাবে দিন যাপন করা
ডুব
- ডুব দেওয়া/মারা – আত্মগোপন করা, নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া
- ডুবে ডুবে জল খাওয়া – গোপনে কাজ করা
- নাম ডুবানো/ডোবানো – খ্যাতি নাশ করা
- ভরাডুবি – সর্বনাশ, সমূহ ক্ষতি
ঢাক/ঢোল
- ডঙ্কা পেটা – সগৌরবে ঘোষণা করা, দম্ভ প্রকাশ করা
- ডামাডোল – গোলযোগ, বিশৃঙ্খলা
- ঢক্কাধ্বনি, ঢক্কানাদ, ঢক্কানিনাদ – উচ্চ ও গর্বিত কণ্ঠে ঘোষণা
- ঢাক করা – ঢাক পিটিয়ে প্রচার করা
- ঢাক পেটা/পেটানো – কোনো কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা
- ঢাক বাজানো – সর্বত্র প্রচার করা
- ঢাকঢাক গুড়গুড় – কোনো কথা চেপে রাখার চেষ্টা। গোপন করার প্রবণতা
- ঢাকঢোল পেটা/পেটানো – সাধারণ্যে প্রচার করা
- ঢাকে কাঠি দেওয়া – ব্যাপকভাবে প্রচার করা
- ঢাকে কাঠি পড়া – সূচনা হওয়া
- ঢাকের কাঠি – নিত্যসঙ্গী, মোসাহেব, তোষামুদে, লেজুরবৃত্তি
- ঢাকের বাঁয়া – সঙ্গে থাকে কিন্তু কাজে আসে না এমন। অনাবশ্যক সঙ্গী
- ঢোল পেটা – ঢোল পিটিয়ে প্রচার করা
- ধর্মের ঢাক আপনি বাজে – পাপ কখনো চাপা থাকে না
ঢেঁকি:
- অনুরোধে ঢেঁকি গেলা – অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনুরোধে কিছু করা
- আমড়া কাঠের ঢেঁকি – অপদার্থ
- উপরোধে ঢেঁকি গেলা – অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনুরোধে কিছু করা
- ঘরের ঢেঁকি কুমির – বলিষ্ঠ ও ভোজনপটু অথচ অলস
- চাল না চুলো, ঢেঁকি না কুলো – নিতান্ত নিঃস্ব
- ঢেঁকি গেলা – গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়া
- ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে – সহজে মন্দভাগ্যের পরিবর্তন হয় না এই অর্থ বোঝাতে ব্যবহৃত প্রবাদ
- ঢেঁকির কচকচি – কলহ
- নিষ্কর্মার ঢেঁকি – অত্যন্ত অলস ব্যক্তি
- বুদ্ধির ঢেঁকি – স্থূলবুদ্ধি, নির্বোধ
তাল (ফলবাচক)
- কাকতালীয় – পরস্পর সম্বন্ধহীন দুটি ঘটনা একত্রে ঘটেছে এমন
- কাকতালীয় ব্যাপার – কার্যকারণহীন ঘটনা
- তাল পড়া – পিঠে কিল পড়া
- তালপাতার সেপাই – লম্বা ও অত্যন্ত কৃশ ব্যক্তি, অতিশয় রোগা ও দুর্বল ব্যক্তি
- তিলকে তাল করা – অতিরঞ্জিত করা
তাল (ছন্দ বা রাশিবাচক)
- তাল করা – বায়না ধরা। জড়ো করা, একত্র করা
- তাল কাটা – ছন্দপতন হওয়া। রেশ কাটা
- তাল ঠোকা – স্বীয় বাহু বা ঊরুতে চপেটাঘাত করে আস্ফালন প্রকাশ ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে আহ্বান করা
- তাল তাল – রাশি রাশি, স্তূপীকৃত
- তাল দেওয়া – আগ বাড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন দেওয়া
- তাল রাখা – অন্যের সঙ্গে নিজের কাজের সঙ্গতি রক্ষা করা
- তালকানা – কাণ্ডজ্ঞানশূন্য
- তাল পাকানো, তালগোল পাকানো – জটিল অবস্থা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, গুলিয়ে ফেলা
তিন
- তিন সত্য – তিনবার সত্যের শপথ
- তিনসন্ধ্যা – সকাল দুপুর ও সন্ধ্যা এই তিনবেলা
- সস্তার তিন অবস্থা – অল্প দামে কেনা নিম্নমানের পণ্য, সস্তার জিনিস প্রায়ই খারাপ থাকে
- থার্ড ক্লাস – নিম্নমানের। নিম্নমানের বস্তু বা বিষয়
তিল
- তিল তিল করে, তিলে তিলে – একটু একটু করে, অল্প অল্প করে
- তিলকে তাল করা – অতিরঞ্জিত করা
- ভাদ্র মাসের তিল
তুলা
- তুলাধুনা করা – প্রবল তিরস্কার বা ভর্ৎসনা করা। প্রচণ্ড প্রহার করা
- তুলারাম খেলারাম – দুশ্চিন্তাজনিত অতিশয় অস্বস্তি, উদ্বেগ
তেল
- কইয়ের তেল দিয়ে কই ভাজা – অন্যের উপর দিয়ে স্বার্থোদ্ধার করা
- গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল – প্রাপ্তির পূর্বেই ভোগের আয়োজন
- তেল দেওয়া – তোষামোদ করা
- তেল নুন লাকড়ি – মোলিক প্রয়োজন
- তেল মাখানো – হীনভাবে তোষামোদ করা
- তেলও কম ভাজাও মুচমুচে – অল্প উপকরণে ভালো ব্যবস্থা
- তেলে বেগুনে জ্বলা – ক্রোধে অগ্নিশর্মা হওয়া
- তেলো মাথায় তেল দেওয়া – যার আছে তাকে আরো দেয়া
- তেলো হাঁড়ি – গম্ভীর
- নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো – নিশ্চিত থাকা
- নিজের চরকায় তেল দেয়া – অন্যের কাজে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দেয়া
- মাছের তেলে মাছ ভাজা – পরে পরে কার্যোদ্ধার
দম
- দম টানা – শ্বাস গ্রহণ করা
- দম দেওয়া – ঘড়ি প্রভৃতির স্প্রিংয়ে পাক দেওয়া
- দম নেওয়া – শ্বাস নেওয়া। বিশ্রাম করে শক্তি সঞ্চয় করা
- দম ফাটা – আবেগে চঞ্চল হওয়া
- দম ফুরানো – ক্লান্ত হওয়া
- দম রাখা – শ্বাস বন্ধ করে থাকা
দশা, অবস্থা:
- অন্তিম অবস্থা – মুমূর্ষু অবস্থা, শেষ দশা
- সস্তার তিন অবস্থা – অল্প দামে কেনা নিম্নমানের পণ্য, সস্তার জিনিস প্রায়ই খারাপ থাকে
- অন্তিমদশা – মুমূর্ষু অবস্থা, শেষ দশা
- অলক্ষ্মীর দশা – শ্রীহীনতা। দারিদ্র্য
- ত্রিশঙ্কু দশা – অনিশ্চিত অবস্থা, দোটানা অবস্থা
- দশাপ্রাপ্তি – মৃত্যু
- নবমী দশা – মূর্ছা। মোহ
- রাহুর দশা – দুঃসময়, অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা
- শনির দশা – অতিশয় দুঃসময় বা অশুভকাল, দুর্দশা
দাঁত:
- আক্কেল দাঁত ওঠা – পাকা বুদ্ধি
- করাতের দাঁত – উভয়সংকট
- দাঁতখিঁচানো – দাঁত বের করে তিরস্কার করা
- দাঁত বসানো – জটিল বিষয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারা
- দাঁতভাঙা – উচ্চারণ করা কঠিন এমন, দুরুচ্চার্য (দাঁতভাঙা শব্দ)। দর্পচূর্ণকারী (দাঁতভাঙা জবাব)
- দুধদাঁত – অল্প বয়সে গজানো অস্থায়ী দাঁত
- দেঁতো হাসি – কৃত্রিম হাসি
- বিষদাঁত, বিষদন্ত – তেজ বা অহংকার প্রদর্শনের মূল শক্তি
দাম, দর
- গলাকাটা দাম – অত্যধিক মূল্য, বেশি দাম
- দর কষা – মূল্য নির্ধারণ করা
- মাটির দরে – অত্যন্ত অল্প মূল্যে
দিন, দিবা
- চব্বিশ ঘণ্টা – সারাদিনরাত ধরে, অনবরত
- দিন আসা – সুদিন আসা। সুযোগ আসা
- দিন কাটা – কালযাপন করা
- দিন গোনা – দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহভরে অপেক্ষা করা
- দিন ঘনিয়ে আসা – দিন ফুরিয়ে আসা। আয়ু ফুরিয়ে আসা
- দিন ফুরানো – আয়ু ফুরিয়ে আসা
- দিনগত পাপক্ষয় – গতানুগতিক ধারায় কালক্ষেপণ
- দিনে দিনে – ধাপে ধাপে, উত্তরোত্তর
- দিবাস্বপ্ন – অবাস্তব কল্পনা
- দু-সন্ধ্যা – দুবেলা, দিনে ও রাতে
- প্রকাশ্য দিবালোকে – দিনের বেলায় ও জনসমক্ষে
দুই, দ্বিতীয়
- এক ঢিলে দুই পাখি মারা – এক প্রচেষ্টায় উভয় উদ্দেশ্য সাধন করা
- এক বনে দুই বাঘ – প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী
- দুই নৌকায় পা দেওয়া – পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষের মন রক্ষার চেষ্টা করা
- দুকান কাটা – নির্লজ্জ, বেহায়া
- দু-চোখের বিষ – অত্যন্ত বিদ্বেষের পাত্র বা বিষয়। শত্রু। চক্ষুশূল
- দুমুখো সাপ – দুজনকে দুরকম কথা বলে শত্রুতা সৃষ্টিকারী
- দু-সন্ধ্যা – দুবেলা, দিনে ও রাতে
- দ্বিতীয় পক্ষ – দ্বিতীয়বার বিবাহ করা পত্নী
দুধ
- দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা – শত্রুকে সযত্নে লালনপালন করা
- দুধ কাটা – দুধ ফেটে যাওয়া
- দুধ তোলা – শিশুর পান করা দুধ বমি করে ফেলা
- দুধ নামা – দুধের সঞ্চার হওয়া
- দুধ ভর করা – দুধের সঞ্চার হওয়া
- দুধদাঁত – অল্প বয়সে গজানো অস্থায়ী দাঁত
- দুধভাত – অত্যন্ত সহজসাধ্য
- দুধেভাতে (থাকা) – পরম আদরযত্নে, ভালোভাবে খেয়ে পরে, সচ্ছল অবস্থায়
- দুধের মাছি – সুসময়ের বন্ধু
- বাঘের দুধ – দুঃসাধ্য বস্তু
- মুখে দুধের গন্ধ
দৃষ্টি, নজর
- অলক্ষ্মীর দৃষ্টি – অভাব-অনটন, দুর্দশা, দুর্ভাগ্য
- আচ্ছন্ন দৃষ্টি – ঝাপসা দৃষ্টি। বিহ্বল দৃষ্টি
- খাটো দৃষ্টি – কৃপণতা
- নজর কাড়া – মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারা
- নজর দেওয়া – খেয়াল রাখা। ঈর্ষাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানো
- নজর লাগা – (লোকবিশ্বাসমতে) কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি ঈর্ষাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর ফলে ক্ষতি হওয়া
- নজরে পড়া – দৃষ্টিগোচর হওয়া। দৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়া। পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করা
- নজরে রাখা – দৃষ্টিসীমার মধ্যে রাখা। লক্ষ রাখা। মনোযোগ দেওয়া
- শনির দৃষ্টি – শনির দশা দ্রষ্টব্য
- শ্যেনদৃষ্টি – বাজপাখির মতো প্রখর দৃষ্টিশক্তি (শ্যেন = বাজপাখি)
ধন
- কুবেরের ধন – কৃপণের ধন
- নাড়িছেঁড়া ধন – গর্ভজাত সন্তান
- পরের ধনে পোদ্দারি – অন্যের টাকায় বাহাদুরি, পরকে কষ্ট দিয়ে নিজের স্বার্থোদ্ধার
- পাপের ধন প্রাশ্চিত্তে যায় – অসদুপায়ে অর্জিত ধন নষ্ট হয়, যে দামে কেনা সেই দামে বিক্রি
- যক্ষের ধন – কৃপণের ধন
- সবে ধন নীলমণি – একমাত্র সন্তান। সর্বস্ব ধন, একমাত্র ভরসা
ধর্ম
- ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির – অত্যন্ত ধার্মিক
- ধর্মের কল – সত্য
- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে – অপকর্ম প্রকাশিত হয়ে পড়েই
- ধর্মের ঢাক আপনি বাজে – পাপ কখনো চাপা থাকে না
- ধর্মের ষাঁড় – স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি, অকর্মণ্য
- বকধার্মিক – (শিকারের অপেক্ষায় বককে শান্ত স্থির ও ধ্যানমগ্ন তপস্বী মনে হয় বলে) বকের মতো ধার্মিকতার ভান করে এমন, কপট, ভণ্ড
ধান, তুষ
- তুষের আগুন, তুষানল – (যা সহজে নেভে না) দীর্ঘস্থায়ী অন্তর্জ্বালা বা দুঃখ
- কত ধানে কত চাল – টের পাওয়ানো
- কাঁচা ধানে মই দেয়া – তৈরি জিনিস নষ্ট করা
- ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে – সহজে মন্দভাগ্যের পরিবর্তন হয় না এই অর্থ বোঝাতে ব্যবহৃত প্রবাদ
- ধান কাঁড়া – ধান ছেঁটে চাল থেকে তুষ পৃথক করা
- ধান কাড়া – ধানখেত চষে আগাছা উৎপাটন করা
- ধান গাছের তক্তা – অস্তিত্ব নেই এমন বস্তু, অলীকবস্তু
- ধান ভানতে শিবের গীত – অপ্রাসঙ্গিক কথার অবতারণা
- পাকা ধানে মই দেওয়া – সুসম্পন্ন কাজ পণ্ড করা, বিপুল ক্ষতি করা
নয়, নবম
- নবমী দশা – মূর্ছা। মোহ
- নমাসে ছমাসে – বহুদিন পরপর, কদাচিৎ
- নয়ছয় – অপব্যয়, অপচয়। আর্থিক অনিয়ম
- যদি হয় সুজন তেঁতুল পাতায় ন জন – মিলেমিশে কাজ করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়
নাক
- নাক উঁচানো – অবজ্ঞা প্রদর্শন করা, ঘৃণা প্রকাশ করা
- নাক গলানো – অনধিকার চর্চা করা, অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ করা
- নাক ঝাড়া – নাক পরিষ্কার করা
- নাক ঝামটা – তিরস্কার
- নাক টেপা – ঘৃণা প্রকাশ করা
- নাক ডাকা – ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাসকালে শব্দ করা
- নাক তোলা – অবজ্ঞায় নাক কুঞ্চিত করা
- নাক ফোঁড়ানো – অলংকার পরার জন্য নাক ছিদ্র করা
- নাক বরাবর – সোজা সামনের দিকে
- নাক বিঁধানো – নাক ফোঁড়ানো দ্রষ্টব্য
- নাক মলা – একই অপরাধ আর না করার প্রতিজ্ঞা করা
- নাক সিঁটকানো – ঘৃণায় অবজ্ঞা প্রকাশ করা
- নাককাটা – নির্লজ্জ
- নাককান কাটা – নির্লজ্জ, বেহায়া
- নাককান মলা – দ্বিতীয়বার একই ভুল বা অপরাধ না করার প্রতিজ্ঞা করা
- নাকানিচুবানি – অত্যন্ত নাজেহাল অবস্থা
- নাকিকান্না – মায়াকান্না, কৃত্রিম কান্না
- নাকে কাঁদা – নাকি সুরে কাঁদা
- নাকে কান্না – নাকি সুরে কান্না। মায়াকান্না
- নাকে খত দেওয়া – মাটিতে নাক ঘষে নিজের ভুল বা অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করা
- নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো – নিশ্চিত থাকা
- নাকেমুখে গোঁজা – তাড়াহুড়ো করে খাওয়া
নাচ, নাচা
- চোখ নাচা – চোখের পাতা স্পন্দিত হওয়া
- তুর্কি নাচ/নাচন – অন্যের নির্দেশে চলার ফলে বিপর্যস্ত অবস্থা, নাজেহাল অবস্থা
- নাচতে না জানলে উঠোন ভাঙা/বাঁকা – অকর্মণ্য ব্যক্তি কাজে অসফলতার পর অন্যের দোষ দেয়
- বাঁদর নাচানো – অসদুদ্দেশ্যে উসকানি দেওয়া
নাম
- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন – যার যে গুণ নেই সে গুণের ভান করা
- নাম করা – নাম উল্লেখ করা
- নাম কাটা – তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া
- নাম ডাকা – রোল কল করা
- নাম ডুবানো/ডোবানো – খ্যাতি নাশ করা
- নাম ধরা – উচ্চারণ করে ডাকা (নাম ধরে ডাকা)
- নাম নেওয়া – স্মরণ করা
- নাম রটা – সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি প্রচারিত হওয়া
- নাম রাখা – নবজাত শিশুর নাম প্রদান করা। সুনাম অক্ষুণ্ন রাখা
- নাম লওয়া – সৃষ্টিকর্তার নাম জপ করা, উপাসনা করা
- নাম লেখানো – লিপিবদ্ধ করানো
- নাম হওয়া – খ্যাতি লাভ করা
- নামকরা – বিখ্যাত, নামজাদা
- নামকাটা – নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এমন। বহিষ্কৃত
- নামকাটা সেপাই – কর্মচ্যুত ব্যক্তি
- নামগন্ধ – আভাস
- নামমাত্র – অতি সামান্য, যৎকিঞ্চিৎ
নাড়ি
- নাড়ি মরা – দীর্ঘদিন ক্রমাগত অপ্রতুল আহারের ফলে ক্ষুধা লোপ পাওয়া
- নাড়িছেঁড়া ধন – গর্ভজাত সন্তান
- নাড়িটেপা ডাক্তার – হাতুড়ে চিকিৎসক
- নাড়িনক্ষত্র – আদ্যোপান্ত সকল তথ্য
- নাড়ির টান – সম্পর্কজনিত ভালোবাসা
পদ্ম
- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন – যার যে গুণ নেই সে গুণের ভান করা
- গোবরে পদ্মফুল – নীচ কুলে মহৎ ব্যক্তি
পা
- আপন পায়ে কুড়াল মারা – নিজের অনিষ্ট নিজে করা
- ঝাড়া হাত পা – ঝামেলাশূন্য
- দুই নৌকায় পা দেওয়া – পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষের মন রক্ষার চেষ্টা করা
- পাজির পা-ঝাড়া – অত্যন্ত পাজি, পাজির হদ্দ
- পায়াভারী – পদগর্বে গর্বিত
- পায়ে ঠেলা – উপেক্ষা করা
- পায়ে পড়া – কাতরভাবে অনুরোধ করা
- পায়ে পায়ে – পদে-পদে (পায়ে পায়ে বাধা)। ধীরপদে (পায়ে পায়ে অগ্রসর হওয়া)
- পেছপা হওয়া – কাজের দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আসা
- ফাঁদে পা দেয়া – ষড়যন্ত্রে পড়া
- বিড়ালের আড়াই পা – বেহায়াপনা। ক্ষণস্থায়ী রাগ
- মাথার ঘাম পায়ে ফেলা – কঠোর দৈহিক পরিশ্রম করা
- লেজে পা পড়া – স্বার্থে আঘাত লাগা
- সাপের ছুঁচো পা দেখা – গর্বে অন্ধ হওয়া
- সাপের পাঁচ পা দেখা – দর্প বা অহংকারের বাড়াবাড়ি
- হাত-পা ছেড়ে দেওয়া – নিশ্চেষ্ট হওয়া, হতাশ হওয়া
- হাতির পাঁচ পা দেখা – অহংকার বোধ করা। দুঃসাহসী হওয়া
- হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা – হেলায় সুযোগ হারানো
পাকা/পাকানো
- ইঁচড়ে পাকা – অকালপক্ব। বখাটে, বাচাল
- কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো – অসম্ভবকে সম্ভব করা
- খিচুড়ি পাকানো – বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা
- ঘোঁট পাকানো – জটলা পাকানো। উত্তেজনা সৃষ্টি করা
- চুল পাকানো – অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা
- চোখ পাকানো – ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করা, রেগে তাকানো
- জগাখিচুড়ি পাকানো – গোলমাল বাধানো
- জট পাকানো – তালগোল পাকিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়া, জট বাঁধা
- তাল পাকানো, তালগোল পাকানো – জটিল অবস্থা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, গুলিয়ে ফেলা
- দড়ি কাটা/পাকানো – পাট সুতা নাইলন প্রভৃতির আঁশ পাকিয়ে দড়ি তৈরি করা
- দল পাকানো – কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে জোট পাকানো
- পাকা ধানে মই দেওয়া – সুসম্পন্ন কাজ পণ্ড করা, বিপুল ক্ষতি করা
- হাড়পাকা – পাকামিতে সিদ্ধহস্ত
- হাত পাকানো – অভ্যাসদ্বারা দক্ষতা অর্জন করা
পাখি
- এক ঢিলে দুই পাখি মারা – এক প্রচেষ্টায় উভয় উদ্দেশ্য সাধন করা
- তোতাবৃত্তি – টিয়াপাখির মতো অন্ধ অনুকরণের স্বভাব
- পাখিপড়া করা
- বক দেখানো – বকের গলা ও মুখের মতো হাত বাঁকিয়ে বিদ্রূপ করা, অশোভন বিদ্রূপ করা
- বকধার্মিক – (শিকারের অপেক্ষায় বককে শান্ত স্থির ও ধ্যানমগ্ন তপস্বী মনে হয় বলে) বকের মতো ধার্মিকতার ভান করে এমন, কপট, ভণ্ড
- বসন্তের কোকিল – সুদিনের বন্ধু, সুসময়ের বন্ধু
- বাজখাঁই আওয়াজ – অত্যন্ত কর্কশ ধ্বনি, গম্ভীর গলার আওয়াজ
- মাছরাঙার কলঙ্ক – অনেক অপরাধীর মধ্যে কেবল একজনকে দোষী সাব্যস্ত করা
- শ্যেনদৃষ্টি – বাজপাখির মতো প্রখর দৃষ্টিশক্তি (শ্যেন = বাজপাখি)
- লঙ্কা পায়রা – কুচক্রী
- সুখের পায়রা – সুসময়ের বন্ধু
পাগল, পাগলা
- পাগলা ঘণ্টা – (সচরাচর কারাগারে) বিপদের সংকেতসূচক ঘণ্টাধ্বনি
- মাথাপাগলা – বাতিকগ্রস্ত, খ্যাপাটে, মাথাখারাপ
- মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল – ভীষণ বিপদে অস্থির অবস্থা
পাথর
- গাছপাথর – অজানা বয়স হিসাবের নির্দেশক শব্দ
- জগদ্দল পাথর – গুরুভার
- পাথরে পাঁচ কিল – অত্যন্ত সুদিন, সুখের সময়
- পাষাণমূর্তি – পাথরের মূর্তির মতো ভাবলেশহীন
- সোনার পাথরবাটি – অসম্ভব বস্তু
পাঁচ, পঞ্চ, পঞ্চম
- পাঁচমিশালি – বিবিধ দ্রব্যের সংমিশ্রণে জাত
- পাথরে পাঁচ কিল – অত্যন্ত সুদিন, সুখের সময়
- সাতপাঁচ ভাবা – অগ্রপশ্চাৎ নানা বিষয়ে ভাবা, নানারকম চিন্তা করা
- সাতেও না পাঁচেও না – নির্লিপ্ত
- সাপের পাঁচ পা দেখা – দর্প বা অহংকারের বাড়াবাড়ি
- হাতির পাঁচ পা দেখা – অহংকার বোধ করা। দুঃসাহসী হওয়া
- হাতের পাঁচ – শেষ সম্বল
- অস্থিতপঞ্চ, অস্থিরপঞ্চক, অস্থিরপঞ্চম – কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। কঠিন সমস্যা
- পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হওয়া – মারা যাওয়া
- পঞ্চত্বপ্রাপ্তি – মৃত্যু
- পঞ্চম বাহিনী – যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ যুদ্ধকালে নিজ দেশের বিরুদ্ধে শত্রুকে সহায়তা করে, বিশ্বাসঘাতক, fifth columnist
- পঞ্চম স্বর – কোকিলের কূজন
- পঞ্চমুখ – মুখর
পুঁটি মাছ
- চুনাপুঁটি, চুনোপুঁটি – গুরুত্বহীন ব্যক্তি, নগণ্য লোক
- পুঁটি মাছের প্রাণ – যা সহজে মরে যায়, ক্ষীণজীবী
পুতুল:
- কাঠের পুতুল – নির্জীব, অসার
- চিনির পুতুল – শ্রমকাতুরে
- ননির পুতুল – শ্রমবিমুখ, অকর্মণ্য
- মোমের পুতুল – সামান্য পরিশ্রমে কাতর হয়ে পড়ে এমন ব্যক্তি
- হাতের পুতুল – যাকে দিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করানো যায়
পেট, আঁত
- আঁত খালি হওয়া – পেট খালি হওয়া
- আঁত পড়া – পেট খালি হওয়া, আঁত বসা
- আঁত বসা – পেট খালি হওয়া, আঁত পড়া
- আঁতে ঘা – মনে ব্যথা দেওয়া, মর্মে আঘাত
- পেট আঁটা – কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
- পেট কামড়ানো – গোপন বিষয় ফাঁস করার জন্য ব্যস্ত হওয়া
- পেট খসা – গর্ভপাত হওয়া
- পেট চালানো – জীবনধারণের জন্য আয় করা
- পেট নামা – বারবার মলত্যাগ করা, উদরাময় হওয়া
- পেট ফাঁপা – বদহজমের কারণে পেটে বায়ু হওয়া
- পেট হওয়া – অন্তঃসত্ত্বা হওয়া
- পেটভাতা – মজুরির পরিবর্তে কেবল অন্নের বিনিময়ে চাকরি
- পেটমোটা – ভুঁড়িওয়ালা
- পেটরোগা – উদরাময় রোগগ্রস্ত
- পেটসর্বস্ব – ভোজনবিলাসী, পেটুক
- পেটে আসা – গর্ভসঞ্চার হওয়া
- পেটে থাকা – মনে গোপন থাকা
- পেটে ধরা – গর্ভে ধারণ করা
- পেটে পেটে – গোপনে
- পেটে ভাতে – মজুরির পরিবর্তে কেবল অন্নের বিনিময়ে
- পেটে সওয়া – হজম করতে সক্ষম হওয়া
- পেটের কথা – মনের গোপন কথা
- পেটের জ্বালা – ক্ষুধার তাড়না
- পেটের দায় – ক্ষুধার তাড়না
- পেটের শত্রু – যে সন্তান মায়ের দুঃখের কারণ
- স্বোদরপূরক – স্বার্থপর (উদর = পেট)
পোষা
- ছা-পোষা – অত্যন্ত গরিব। নিরীহ ব্যক্তি
- দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা – শত্রুকে সযত্নে লালনপালন করা
- শ্বেতহস্তী পোষা – অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়সাপেক্ষ পদক্ষেপ করা
- হাতি পোষা – অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য কাজ করা
প্রাণ
- কই মাছের প্রাণ – যা সহজে মরে না, দীর্ঘজীবী
- চাচা আপন প্রাণ বাঁচা – স্বার্থপর
- পুঁটি মাছের প্রাণ – যা সহজে মরে যায়, ক্ষীণজীবী
- প্রাণ উড়ে যাওয়া – ভীষণ ভয় পাওয়া
- প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়া – অতিশয় কষ্টকর অবস্থায় পড়া
- প্রাণ থাকা – বেঁচে থাকা, বাঁচা
- প্রাণ দেওয়া – লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রাণ উৎসর্গ করা। জীবন বাঁচানো
- প্রাণ যাওয়া – মৃত্যু হওয়া, দেহত্যাগ করা
- প্রাণ লওয়া – হত্যা করা
- প্রাণকৃষ্ণ – পরম আদরের ব্যক্তি
- প্রাণকেন্দ্র – প্রধান বা মূল কেন্দ্র
- প্রাণখোলা – সরল, উদাত্ত
- প্রাণত্যাগ, প্রাণবিয়োগ – মৃত্যু, মরণ, দেহত্যাগ
- প্রাণবিসর্জন – মৃত্যুবরণ, দেহত্যাগ
- প্রাণান্ত পরিচ্ছেদ – সীমাহীন পরিশ্রম
- প্রাণে মারা – হত্যা করা
ফাঁদ, টোপ
- ঘুঘু দেখেছ, ফাঁদ দেখোনি – বিপন্ন করার ভীতি প্রদর্শন
- টোপ ফেলা – ফাঁদ পাতা
- ফাঁদ পাতা – কারো ক্ষতিসাধনের জন্য চক্রান্তজাল বিস্তার করা
- ফাঁদে পা দেয়া – ষড়যন্ত্রে পড়া
ফুল
- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন – যার যে গুণ নেই সে গুণের ভান করা
- গোবরে পদ্মফুল – নীচ কুলে মহৎ ব্যক্তি
- চোখে সরষেফুল দেখা – বিপদে পড়ে দিশেহারা হওয়া
- ডুমুরের ফুল – দেখা মেলে না এমন দুর্লভ বস্তু, বিরল বস্তু, অমাবস্যার চাঁদ
- ফুল তোলা – কাপড়ে ফুলের নকশা করা
- ফুল পড়া – প্রসবের পরে গর্ভস্থ ফুল স্খলিত হওয়া
- ফুলের আঘাত – সামান্য দুঃখ কষ্ট
- ফুলের ঘাঁয়ে মূর্ছা যাওয়া
- বিয়ের ফুল ফোটা – বিয়ের লক্ষণ বা সম্ভাবনা দেখা দেওয়া
- বুক ফুলে ওঠা – গর্বিত বা আনন্দিত হওয়া
- মুখে ফুলচন্দন পড়া – শুভ সংবাদের জন্য ধন্যবাদ দেয়া
বজ্র
- বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো – বাহিরে আড়ম্বর ভিতরে শূন্য
- বিনা মেঘে বজ্রপাত – আকস্মিক বিপদ
বন, অরণ্য
- অরণ্যে রোদন – নিষ্ফল আবেদন, বিফল প্রার্থনা। বৃথা চেষ্টা
- উলু বনে মুক্তা ছড়ানো – অস্থানে মূল্যবান দ্রব্য প্রদান। অপাত্রে সম্প্রদান করা
- এক বনে দুই বাঘ – প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী
- ওঝার ব্যাটা বনগরু – পণ্ডিতের মূর্খ পুত্র
- কচু বনের কালাচাঁদ
- ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো
- তুলসীবনের বাঘ – সাধুরূপে পরিচিত অসাধু ব্যক্তি, ভণ্ড
- থ বনে যাওয়া – স্বম্ভিত হওয়া (বনা = পরিণত হওয়া। বনা > বনে, এখানে বন বা জঙ্গল অর্থে নয়)
- বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে – জীবমাত্রই স্বাভাবিক অবস্থানে সুন্দর
বড়ো
- বড়ো করা – বাড়িয়ে তোলা, উন্নত করা। লালনপালন করা
- বড়ো গলা – গর্ব, অহংকার
- বড়োলোক – ধনী ব্যক্তি
- বড়ো হওয়া – গুরুত্বপূর্ণ হওয়া। ধন যশ প্রভৃতি বৃদ্ধি পাওয়া
বয়স
- কাঁচা বয়স – অপরিণত বয়স, অল্পবয়স
- বয়স হওয়া – সাবালক হওয়া। বৃদ্ধ হওয়া
- হাঁটুর বয়সি – বয়সে অনেক ছোটো
বাঁচা, বাঁচানো
- গলা বাঁচানো – প্রাণ বাঁচানো
- চাচা আপন প্রাণ বাঁচা – স্বার্থপর
- হাঁপ ছেড়ে বাঁচা – শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়া
বাঁধা
- আটঘাট বাঁধা – চতুর্দিক বন্ধ করা
- কোমর বাঁধা – কোনো কাজে উঠেপড়ে লাগা, কোনো বিষয়ে দৃঢ়সংকল্প হওয়া
- ঘর বাঁধা – সংসার পাতা। গৃহনির্মাণ করা, বসতিস্থাপন করা
- ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধা – পরকে আপন করার চেষ্টা
- জট বাঁধা – তালগোল পাকিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়া, জট পাকানো
- জুটি বাঁধা – জোড় বাঁধা
- জোট বাঁধা – দলবদ্ধ হওয়া
- দুয়ারে হাতি বাঁধা – ঐশ্বর্যের দম্ভ প্রকাশ করা
- বাঁধা গৎ – বৈচিত্র্যহীন নিয়ম বা রীতি। নির্দিষ্ট কথা বা সুর
- বুক বাঁধা – ধৈর্যধারণ ও সাহস অবলম্বন করা
বাঘ:
- এক বনে দুই বাঘ – প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী
- কাগুজে বাঘ – কেবল কাগজেই আছে কিন্তু বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন
- জলে কুমির ডাঙায় বাঘ – উভয়সংকট
- তুলসীবনের বাঘ – সাধুরূপে পরিচিত অসাধু ব্যক্তি, ভণ্ড
- বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়া – ক্ষমতা প্রদর্শন
- বাঘের আড়ি – নাছোড়বান্দা, দুশমনি
- বাঘের চোখ – দুঃসাধ্য বস্তু
- বাঘের দুধ – দুঃসাধ্য বস্তু
- বাঘের মাসি – আরামপ্রিয় ব্যক্তি
- যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয় – যেখানে ভয়, সেখানে বিপদ হয়
- রায়বাঘিনি – বড়ো বাঘিনি। অতিশয় উগ্র ও তেজস্বী নারী
বাজার
- বাজার গরম হওয়া – পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়া। বিক্রি বেড়ে যাওয়া। অনর্থক হইচই করা
- বাজার চড়া – পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়া
- বাজার নরম – পণ্যদ্রব্যের মূল্যহ্রাস
- বাজার বসা – বাজারে বেচাকেনা শুরু হওয়া। প্রচণ্ড হট্টগোল হওয়া
- বাজারে কাটা – বিক্রি হওয়া
- বাজারে দাঁড়ানো – ভালো বিক্রি হওয়া, বিক্রয় পণ্যরূপে প্রতিযোগিতায় টিকে যাওয়া
বাতাস, বায়ু, হাওয়া
- উনপঞ্চাশ পবন – পাগলামির হাওয়া (ঊনপঞ্চাশ বায়ু – পাগলামী)
- ধর্মের কল বাতাসে নড়ে – অপকর্ম প্রকাশিত হয়ে পড়েই
- বাতাস করা – হাওয়া দেওয়া
- বাতাস খাওয়া – মুক্তবায়ু বা পাখার হাওয়া উপভোগ করা
- বায়ু পরিবর্তন – স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য স্থান পরিবর্তন, হাওয়াবদল
- হাওয়া খাওয়া – বেড়ানো। কিছু না খাওয়া
- হাওয়া বদল – স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য ভিন্ন স্থানে গমন (যে স্থানের বাতাস দূষণমুক্ত সেখানে গমন)
- হাওয়া হওয়া – নিরুদ্দেশ হওয়া, চম্পট দেওয়া
- হাড়ে বাতাস লাগা – শান্তি পাওয়া
বানর, বাঁদর
- বাঁদর নাচানো – অসদুদ্দেশ্যে উসকানি দেওয়া
- বানরের গলায় মুক্তার হার – অপাত্রে উৎকৃষ্ট সামগ্রী দান
- শিব গড়তে বাঁদর গড়া – খুব ভালো কিছু করতে গিয়ে খুব খারাপ কিছু করে ফেলা
বাবা, বাপ
- ঠ্যালার নাম বাবাজী – চাপ পড়লেই কাবু
- বাপের বেটা – পিতার যোগ্য পুত্র
- ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ – অপব্যয়
বারো
- বারো মাস ত্রিশদিন – প্রতিদিন
- বারোভূত – নানা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি, ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিবর্গ
- বারোমাসে তেরো পার্বণ – বছরজুড়ে অনুষ্ঠেয় বাঙালির নানা উৎসব, উৎসবের আধিক্য
বালু/বালি
- গুড়ে বালি – আশায় নৈরাশ্য
- চোখে ধুলো দেওয়া – প্রকৃত তথ্য গোপন করে প্রতারণা করা
- চোখের বালি – শত্রু, চক্ষুশূল, অপ্রিয় ব্যক্তি
- চোরাবালি – অদৃশ্য বিপদাশঙ্কা
- বড় পিরীতি বালির বাঁধ – ভঙ্গুর
- বালির বাঁধ – ক্ষণস্থায়ী বস্তু
বিড়াল:
- বিড়ালতপস্বী – সাধুর ছদ্মবেশে কপট ব্যক্তি, ভণ্ড লোক
- বিড়ালের আড়াই পা – বেহায়াপনা। ক্ষণস্থায়ী রাগ
- বিড়ালের ভাগ্যে শিকা ছেঁড়া – ভাগ্যক্রমে বিনা চেষ্টাতে বাঞ্ছিত বস্তু লাভ
- ভিজাবিড়াল, ভিজেবিড়াল – আপাতদৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ভেজা বিড়ালের মতো নিরীহ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে দুষ্টপ্রকৃতির লোক, ভণ্ড, কপটাচারী
- বিদুরের খুদ, বিড়ালের খুদ – ভক্তিভরে প্রদত্ত দরিদ্রজনের দান (অশ্রদ্ধার সঙ্গে প্রদত্ত কুরুরাজ দুর্যোধনের রাজভোগ প্রত্যাখ্যান করে বিদুর প্রদত্ত যে খুদ কৃষ্ণ ভক্ষণ করেছিলেন)
- মেনিমুখো – মুখচোরা, লাজুক। ভালো মানুষের ভান করে এমন, কপট (মেনি অর্থ বিড়ালী)
- ষষ্ঠীর বাহন – বিড়াল
বিদ্যা, শিক্ষা, জ্ঞান
- অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী – অগভীর জ্ঞান থেকে জাত অহংকার যা ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে, স্বল্প জ্ঞান নিয়ে বাড়াবাড়ি মূর্খতার পরিচয়
- কেতাবি বিদ্যা – বাস্তবতাবর্জিত কেবল বই পড়ে অর্জিত বিদ্যা, পুথিগত বিদ্যা
- গুরুমারা বিদ্যা – গুরুর কাছে শেখা যে বিদ্যা গুরুর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়
- পুথিগত বিদ্যা – যে বিদ্যা কেবল পুথিতেই সীমাবদ্ধ
- বিদ্যা ফলানো – বিদ্যা জাহির করা
- বিদ্যার জাহাজ
- মুখস্থবিদ্যা – মর্ম না বুঝে কেবর মুখস্থ করে অর্জিত বিদ্যা
- ঠেকে শেখা – দায়ে পড়ে কোনো বিষয়ে শিক্ষালাভ করা
- শিক্ষা দেওয়া – জব্দ করা, মজা দেখানো (মজা দেখানো ভুক্তিতে রয়েছে)
- পড়া ধরা/নেওয়া – নির্দিষ্ট পাঠ ঠিকমতো শেখা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা
- ধরাকে সরা জ্ঞান করা – সকলকে তুচ্ছ ভাবা
- বিন্দুতে সিন্ধুজ্ঞান – অতি সামান্য পরিমাণকে প্রচুর বলে কল্পনা
- ভেদাভেদ জ্ঞান/বোধ – আপনপর জ্ঞান
বুক
- ছাতি পেটা – বুক চাপড়ানো (ছাতি = বুকের পাটা। সাহস)
- ডাকাবুকা, ডাকাবুকো – দুরন্ত, নির্ভীক
- বুক কাঁপা – ভয় পাওয়ার ফলে হৃদযন্ত্রের কম্পনের হার বেড়ে যাওয়া
- বুক চাপড়ানো – শোক বা দুঃখে বারবার বুকে চাপড় মারা
- বুক চিতিয়ে চলা – সাহসের সঙ্গে অগ্রসর হওয়া
- বুক জুড়ানো – মনে শান্তি পাওয়া
- বুক জ্বালা – অম্লরোগের কারণে বুকের প্রদাহ
- বুক পাতা – দুঃখকষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত থাকা
- বুক ফুলে ওঠা – গর্বিত বা আনন্দিত হওয়া
- বুক ফোলানো – গর্ব প্রকাশ করা
- বুক বাঁধা – ধৈর্যধারণ ও সাহস অবলম্বন করা
- বুক ভাঙা – মনোকষ্টে ভেঙে পড়া, আশাহত হওয়া
- বুকজুড়ানো – মনে শান্তিদানকারী
- বুকফাটা – অতিশয় বেদনাদায়ক, হৃদয়বিদারক
- বুকের পাটা – সাহস, দুঃসাহস
বেগুন
- তেলে বেগুনে জ্বলা – ক্রোধে অগ্নিশর্মা হওয়া
- বিলাতি বেগুন, বিলেতি বেগুন – টম্যাটো
ব্যাং, ব্যাঙ:
- ব্যাঙের আধুলি – গরিবের অতি সামান্য সঞ্চয়। সামান্য ধনে অহংকার
- ব্যাঙের ছাতা – ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদবিশেষ, মাশরুম, mushroom
- ব্যাঙের সর্দি – অসম্ভব ঘটনা
- কুনো ব্যাং –ঘরকুনো ব্যক্তি, সীমিত জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি
- কুয়োর ব্যাং – ঘরকুনো ব্যক্তি, যে ব্যক্তি বহির্বিশ্বের কোনো খবর রাখে না
- কূপমণ্ডূক – ঘরকুনো ব্যক্তি, সীমাবদ্ধ জ্ঞানসম্পন্ন, সংকীর্ণচেতা ব্যক্তি
বিষ
- গোদের উপর বিষফোঁড়া – যন্ত্রণার উপর যন্ত্রণা
- তামার বিষ – অর্থের কুপ্রভাব
- দু-চোখের বিষ – অত্যন্ত বিদ্বেষের পাত্র বা বিষয়। শত্রু। চক্ষুশূল
- বিষ ঝাড়া – ঝাড়ফুঁকের সাহায্যে বিষক্রিয়া নাশনের ভান করা
- বিষদাঁত, বিষদন্ত – তেজ বা অহংকার প্রদর্শনের মূল শক্তি
- বিষ নেই তার, কুলোপনা চক্কর – অক্ষম ব্যক্তির বৃথা আস্ফালন
- বিষ মারা – শক্তি বা তেজ খর্ব করা
- বিষের পুঁটলি – হিংসুটে, বিদ্বেষী
বেল
- গজভুক্ত কপিত্থবৎ, গজকপিত্থবৎ – অন্তঃসারশূন্য (শাব্দিক অর্থ:- পোকায় খাওয়া ফাঁপা কতবেলের মতো। গজ অর্থ:- ক্ষুদ্র কীটবিশেষ। কপিত্থ অর্থ:- কতবেল)
- পত্রশ্রেষ্ঠ – বেলগাছ
- রাই কুড়িয়ে বেল – কণা সংগ্রহ করে বড়ো কিছু সৃষ্টি করা। ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে বৃহৎ
ভাগ্য
- অদৃষ্টলিপি – কপালের লিখন
- অদৃষ্টের পরিহাস – ভাগ্যের বিড়ম্বনা
- বিড়ালের ভাগ্যে শিকা ছেঁড়া – ভাগ্যক্রমে বিনা চেষ্টাতে বাঞ্ছিত বস্তু লাভ
- ভাগ্যের দোহায় দেওয়া – কপালে হাত দেওয়া
- ষষ্ঠীভাগ্য – সন্তানভাগ্য
ভাত, অন্ন
- অন্ন ওঠা – জীবিকা বন্ধ হওয়া। পরমায়ু শেষ হওয়া
- অন্নচিন্তা চমৎকারা – অন্তচিন্তা এমনই চমৎকার যে ক্ষুধায় কাতর ব্যক্তির কোনো গুণের বিকাশ সম্ভব নয়
- দুধভাত – অত্যন্ত সহজসাধ্য
- দুধেভাতে (থাকা) – পরম আদরযত্নে, ভালোভাবে খেয়ে পরে, সচ্ছল অবস্থায়
- পান্তাভাত – অতি তুচ্ছ ব্যাপার
- পান্তাভাতে ঘি – অপব্যবহার
- পেটভাতা – মজুরির পরিবর্তে কেবল অন্নের বিনিময়ে চাকরি
- পেটে ভাতে – মজুরির পরিবর্তে কেবল অন্নের বিনিময়ে
- বাড়া ভাতে ছাই – আশা ভঙ্গ
- হাড়হাভাতে – সম্পূর্ণ নিঃস্ব, লক্ষ্মীছাড়া
ভালো, উত্তম
- উত্তমমধ্যম – প্রচণ্ড প্রহার, মারধর
- ভালো করা – উপকার করা, মঙ্গলসাধন করা। চিকিৎসাদ্বারা রোগমুক্ত করা
- ভালো মনে – সরলবিশ্বাসে। প্রসন্নচিত্তে
- ভালোমানুষ সাজা – সৎ ও সরল মানুষের ভান করা
- মন্দের ভালো – অনেক মন্দের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মন্দ
ভিজা, ভেজা
- কথায় চিড়া ভেজা – ফাঁকা আওয়াজে কাজ আদায়
- ভিজাবিড়াল, ভিজেবিড়াল – আপাতদৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ভেজা বিড়ালের মতো নিরীহ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে দুষ্টপ্রকৃতির লোক, ভণ্ড, কপটাচারী
ভুল, ভোলা
- ঘর জ্বালানো পর ভুলানো – আত্মীয়ের কষ্টদায়ক অথচ অপরের প্রিয়
- চোখের ভুল – দেখার ভুল
- ভুল বোঝাবুঝি – পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব
- মনভোলা – কিছু মনে থাকে না এমন, ভুলো, আত্মবিস্মৃত
- মন ভোলানো – চিত্ত বিমোহিত করা, মন হরণ করা
ভূত, দৈত্য, রাক্ষস
- দশচক্রে ভগবান ভূত – দশ জনের চক্রান্তে ন্যায়কে অন্যায় করা
- বারোভূত – নানা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি, ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিবর্গ
- ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ – অপব্যয়
- ভূতের ব্যাগার – অযথা শ্রম
- সুখে থাকতে ভূতে কিলায় – স্বেচ্ছায় দুঃখ বরণকারী
- দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ – খারাপ বংশে ভালো মানুষ
- রাক্ষস বিবাহ – কনেকে অপহরণ করে বলপূর্বক বিবাহ
- রাক্ষসী বেলা – দিনের শেষ আড়াই ঘণ্টা সময়
- রাক্ষসী মায়া – মারাত্মক ছলনা
ভেড়া, গড্ডল
- গড্ডলিকা/গড্ডরিকা প্রবাহ – বিচারবিবেচনা না করে অন্যের অন্ধ অনুকরণ, প্রচলিত ধারার অনুগামিতা (গড্ডল অর্থ:- ভেড়া, মেষ। গড্ডলিকা অর্থ:- অগ্রবর্তী ভেড়াকে অনুসরণকারী ভেড়ার পাল)
- ভেড়াকান্ত – শ্রেষ্ঠ বোকা
- ভেড়ার পাল – অন্ধ অনুকরণ
মই
- কাঁচা ধানে মই দেয়া – তৈরি জিনিস নষ্ট করা
- গাছে তুলে মই কাড়া – সাহায্যের আশা দিয়ে সাহায্য না করা
- পাকা ধানে মই দেওয়া – সুসম্পন্ন কাজ পণ্ড করা, বিপুল ক্ষতি করা
- মই দেওয়া – সর্বনাশ করা
মজা
- মজা টের পাওয়া – জব্দ হওয়া, বিপদ উপলব্ধি করা
- মজা দেখা – অন্যের অসহায়ত্ব দেখে মজা পাওয়া
- মজা দেখানো – শিক্ষা দেওয়া, জব্দ করা
- মজা লোটা – আনন্দ উপভোগ করা
- মন মজা – কোনো কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাতে নিবিষ্ট থাকা
মণি
- চোখের মণি – অত্যন্ত প্রিয় বস্তু
- মণিকাঞ্চনযোগ – মানানসই হওয়া (স্বর্ণের সঙ্গে মণির যোগের মতো সুন্দর ও শোভন মিল)
- মণিহারা ফণী – প্রিয়জন বা কাঙ্ক্ষিত বস্তু হারানোর ফলে অস্থিরচিত্ত ব্যক্তি, প্রিয়জনের জন্য অস্থির লোক
- সবে ধন নীলমণি – একমাত্র সন্তান। সর্বস্ব ধন, একমাত্র ভরসা
মন, অন্তর
- অন্তরটিপুনি – অগোচরে অন্যের হৃদয়ে গোপনে আঘাতদান। গোপন ব্যথা। মর্মপীড়াদায়ক
- ভালো মনে – সরলবিশ্বাসে। প্রসন্নচিত্তে
- মন উনচান করা – অস্থির হওয়া
- মন ওঠা – আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
- মন কষা – মনকে দৃঢ় করা। মন পরীক্ষা করা
- মন কাড়া – মোহিত করা, মুগ্ধ করা
- মন কেমন করা – মন ভারাক্রান্ত বা ব্যাকুল হওয়া
- মন খারাপ করা – মনে দুঃখ পাওয়া
- মন খোলা – মনের কথা অকপটে খুলে বলা
- মন গলা – হৃদয় বিগলিত হওয়া
- মন জোগানো – অন্যের খুশিমতো কাজ করা
- মন টলা – পূর্বসংকল্প বা অভিপ্রায় শিথিল হওয়া, মতের পরিবর্তন হওয়া
- মন টানা – মন আকৃষ্ট করা
- মন দেওয়া – মনোসংযোগ করা। ভালোবাসা
- মন দেওয়া-নেওয়া – পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা অনুভূত হওয়া, পরস্পরকে ভালোবাসা
- মন না মতি – অস্থির মানব মন
- মন ফেরানো – কোনো কিছু থেকে মনকে নিবৃত্ত করা
- মন বসা – চিত্ত স্থির হওয়া, ভালো লাগা
- মন ভার হওয়া – বিষাদগ্রস্ত হওয়া, অপ্রসন্ন হওয়া
- মনভোলা – কিছু মনে থাকে না এমন, ভুলো, আত্মবিস্মৃত
- মন ভোলানো – চিত্ত বিমোহিত করা, মন হরণ করা
- মন মজা – কোনো কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাতে নিবিষ্ট থাকা
- মনমরা – বিমর্ষ, উৎসাহহীন
- মন মাতানো – মুগ্ধ করা
- মন রাখা – অন্যের মন রক্ষা করা
- মন লাগা – কোনো ব্যক্তি অথবা বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বা উৎসাহ বোধ করা
- মন লাগানো – মনোযোগ দেওয়া, মনোনিবেশ করা
- মন হরা – চিত্ত হরণ করা
- মনে করা – স্মরণ করা। চিন্তা করা। সংকল্প করা
- মনে জাগা – স্মরণ হওয়া
- মনে থাকা – স্মরণে থাকা
- মনে ধরা – পছন্দসই হওয়া
- মনে মনে – বাইরে প্রকাশ না করে। কল্পনায়
- মনে রাখা – স্মরণে রাখা
- মনের আগুন – শোক ও দুঃখজনিত মনের তীব্র জ্বালা, অন্তর্দাহ
- মনের জোর – মানসিক শক্তি বা দৃঢ়তা, মনোবল, আত্মবিশ্বাস
ময়ূর
- দাঁড়কাকের ময়ূরপুচ্ছ – ছোটো হয়ে বড়োদের অনুকরণের চেস্টা। ভণ্ডামির চিহ্ন
- শিখণ্ডী খাড়া করা – কারও আড়ালে থেকে অন্যায় কাজ করা (শিখণ্ডী = ময়ূর)
মা
- ভাগের মা গঙ্গা পায় না – ভাগাভাগির কাজ সিদ্ধ হয় না
- ভাড়ে মা ভবানী – রিক্ত হস্ত
- মাছের মা – নির্মম, নিষ্ঠুর
- মাছের মায়ের পুত্রশোক – কপট বেদনাবোধ
- বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে – জীবমাত্রই স্বাভাবিক অবস্থানে সুন্দর
মাছ
- অগাধ জলের মাছ – সুচতুর ব্যক্তি
- অল্প জলের মাছ – যে ব্যক্তি সামান্য বিদ্যা নিয়ে অধিক পাণ্ডিত্যের ভান করে। যে ব্যক্তি সামান্য সম্পদ নিয়ে গর্ব করে
- ইলশেগুঁড়ি, ইলশাগুঁড়ি – গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, ঝিরঝিরে বৃষ্টি (যে বৃষ্টিতে অধিক সংখ্যক ইলিশমাছ ধরা পড়ে এমন ধারণা)
- কই মাছের প্রাণ – যা সহজে মরে না, দীর্ঘজীবী
- গভীর জলের মাছ – সুচতুর ব্যক্তি
- ধরি মাছ না ছুঁই পানি – কৌশলে কার্যোদ্ধার
- পুঁটি মাছের প্রাণ – যা সহজে মরে যায়, ক্ষীণজীবী
- মাছরাঙার কলঙ্ক – অনেক অপরাধীর মধ্যে কেবল একজনকে দোষী সাব্যস্ত করা
- মাছের তেলে মাছ ভাজা – পরে পরে কার্যোদ্ধার
- মাছের মা – নির্মম, নিষ্ঠুর
- মাছের মায়ের পুত্রশোক – কপট বেদনাবোধ
- মেছো হাটা
- রাঘববোয়াল – অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক, ক্ষমতাশালী ব্যক্তি (শাব্দিক অর্থ:- বিশালাকৃতির বোয়াল মাছবিশেষ)
- রুইকাতলা – সমাজের বিত্তবান ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিবর্গ, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, ক্ষমতাশালী লোকজন
- শাক দিয়ে মাছ ঢাকা – দোষ গোপনের বৃথা চেষ্টা
মাছি
- দুধের মাছি – সুসময়ের বন্ধু
- মাছিমারা কেরানি – অন্ধ অনুকরণকারী ব্যক্তি, বিচারবুদ্ধিহীন লোক
মাটি
- বিলাতি মাটি – সিমেন্ট
- মাটি করা – ব্যর্থ করা, পণ্ড করা
- মাটি দেওয়া – কবর দেওয়া
- মাটি মাড়ানো – আগমন করা, পদার্পণ করা। নিকটবর্তী পথে যাতায়াত করা
- মাটির দরে – অত্যন্ত অল্প মূল্যে
- মাটির মানুষ – নিরীহ ব্যক্তি
- যার লাঠি তার মাটি – জোর যার মুল্লক তার
মাথা
- উর্বরমস্তিষ্ক – মাথায় নানা রকম বুদ্ধি খেলে এমন
- এক ক্ষুরে মাথা মুড়ানো – একই স্বভাবের
- গর্দান যাওয়া – মাথা কাটা যাওয়া
- চোখের মাথা খাওয়া – দৃষ্টিশক্তি হারানো
- তেলো মাথায় তেল দেওয়া – যার আছে তাকে আরো দেয়া
- পরের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা – অন্যের টাকায় বাহাদুরি, পরকে কষ্ট দিয়ে নিজের স্বার্থোদ্ধার
- পাড়া মাথায় করা – চিৎকার করে পাড়া সরগরম করা
- মাথা আঁচড়ানো – চিরুনি দিয়ে কেশবিন্যাস করা
- মাথা উঁচু করা – বিপদ কাটিয়ে ওঠা। উন্নতি করা। বিদ্রোহ করা
- মাথা করা – ক্ষতি করতে অসমর্থ হওয়া
- মাথা কাটা যাওয়া – অত্যন্ত লজ্জা পাওয়া, অপমানিত হওয়া
- মাথা কেনা – সর্বময় কর্তা বনে যাওয়া, সর্বেসর্বা হওয়া
- মাথা কোটা – মনের দুঃখে মাথা ঠোকা। প্রার্থনা পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করা
- মাথা খাও – মাথার দিব্যি দিয়ে শপথ করার অনুরোধ
- মাথা খাওয়া – সর্বনাশ করা, অত্যধিক প্রশ্রয় দিয়ে বিগড়ে দেওয়া
- মাথা খাটানো – মস্তিষ্ক বা বুদ্ধি চালনা করা
- মাথা খারাপ করা – দুশ্চিন্তাহেতু অস্থির হওয়া
- মাথা খেলানো – বুদ্ধি খাটানো
- মাথা খোঁড়া – মাথা কোটা দ্রষ্টব্য
- মাথা গলানো – অনধিকারচর্চায় লিপ্ত হওয়া
- মাথা গুলানো – হতবুদ্ধি করা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া
- মাথা গোঁজা – বসবাস করার জন্য কোনো রকমে আশ্রয় বা ঠাঁই পাওয়া
- মাথা ঘামানো – কোনো বিষয়ে চিন্তামগ্ন হওয়া
- মাথা ঘোরা – চারদিক ঘুরছে এমন বোধ করা। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া
- মাথা চাড়া দেওয়া – নিজের অস্তিত্ব জ্ঞাপন করা। হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে ওঠা
- মাথা চুলকানো – কোনো কিছুর জবাব উপায় বা সংকল্প স্থির করতে না পেরে মাথায় আঙুল চালনা করা
- মাথা ঠান্ডা করা – উত্তেজনা দূর করে শান্ত হওয়া, ক্রোধ পরিহার করা
- মাথা ঠিক রাখা – বিপদ বা উত্তেজনায় শান্ত ও অবিচলিত থাকা
- মাথা তোলা – সতোজ হয়ে ওঠা। উন্নতি করা। বিদ্রোহী হওয়া
- মাথা নিচু হওয়া – লজ্জা ও অপমানে কুণ্ঠিতবোধ করা, মর্যাদাহানি ঘটা
- মাথা নোয়ানো – নতিস্বীকার করা
- মাথা পেতে নেওয়া – শিরোধার্য বলে মেনে নেওয়া, সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করা
- মাথা বিকানো – সম্পূর্ণরূপে বশ্যতা স্বীকার করা। চিন্তাশক্তি বিসর্জন দেওয়া
- মাথা হেঁট হওয়া – লজ্জা বা অপমানে মাথা নত হওয়া। নতিস্বীকার করা
- মাথাওয়ালা – বুদ্ধিমান, চতুর
- মাথাখারাপ – অপ্রকৃতিস্থ, খ্যাপাটে, মাথাপাগলা
- মাথাগরম – রাগী, বদমেজাজি
- মাথাগরম করা – উত্তেজিত হওয়া, ক্রুদ্ধ হওয়া। অস্থির হওয়া
- মাথাগরম হওয়া – ক্রোধ সৃষ্টি হওয়া, রাগান্বিত হওয়া। অস্থির হওয়া
- মাথাধরা – মাথায় যন্ত্রণাবোধ, শিরঃপীড়াবিশেষ
- মাথাপাগলা – বাতিকগ্রস্ত, খ্যাপাটে, মাথাখারাপ
- মাথাপিছু – জনপ্রতি
- মাথাব্যথা – শিরঃপীড়া। গরজ, আগ্রহ
- মাথামুন্ডু – বোঝার মতো বিষয়
- মাথামোটা – স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন, নির্বোধ, গোঁয়ার, একরোখা
- মাথায় ওঠা – অত্যধিক প্রশ্রয় পেয়ে দুর্বিনীত বা স্পর্ধিত হওয়া
- মাথায় করা – জানান দেওয়া। অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া। উপেক্ষা করা
- মাথায় কাঁঠাল ভাঙা – ফাঁকি দিয়ে সুবিধা আদায় করা
- মাথায় খাটো – বেঁটে, খর্বাকৃতি
- মাথায় খুন চাপা – অতিশয় ক্রুদ্ধ হওয়া
- মাথায় ঢোকা – বুঝতে পারা
- মাথায় তোলা – অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া
- মাথায় রাখা – ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের জন্য মনে রাখা। অত্যন্ত শ্রদ্ধা করা। আদরযত্নে রাখা
- মাথায় হাত – হতাশা বিস্ময় প্রভৃতি কারণে হতচকিতবোধ
- মাথায় হাত বুলানো – কৌশলে বা ফাঁকি দিয়ে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা করা। আদর করা
- মাথার খুলি – করোটি, খর্পর
- মাথার ঘাম পায়ে ফেলা – কঠোর দৈহিক পরিশ্রম করা
- মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল – ভীষণ বিপদে অস্থির অবস্থা
- মাথার দিব্যি – শপথ, হলফ
- শিয়রে শমন – মরণ সন্নিকটে এমন অবস্থা (শিয়র = শয়নকারীর মাথার দিক)
মানুষ
- উটকো মানুষ – অপরিচিত বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি
- এক কথার মানুষ – দৃঢ়সংকল্প ব্যক্তি
- কোলেপিঠে মানুষ করা – লালনপালন করা
- ছেলেমানুষি – বালকসুলভ আচরণ
- ভালোমানুষ সাজা – সৎ ও সরল মানুষের ভান করা
- মাটির মানুষ – নিরীহ ব্যক্তি
- মানুষ করা – মানবশিশুকে সযত্নে প্রতিপালন করা
মাস
- আঠারো মাসে বছর – দীর্ঘসূত্রতা
- কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ – কারো সুদিন, কারো দুর্দিন
- নমাসে ছমাসে – বহুদিন পরপর, কদাচিৎ
- বারো মাস ত্রিশদিন – প্রতিদিন
- বারোমাসে তেরো পার্বণ – বছরজুড়ে অনুষ্ঠেয় বাঙালির নানা উৎসব, উৎসবের আধিক্য
- ভাদ্র মাসের তিল
- গায়ে মাংস/মাস লাগা – স্বাস্থ্য ভালো হওয়া
মায়া
- মায়া কাটানো – মোহ বা স্নেহের বন্ধন ছিন্ন করা
- মায়া দেখানো – মমতা প্রদর্শন করা
- মায়া পড়া – স্নেহমমতায় আবিষ্ট হওয়অ
- মায়াকান্না – লোকদেখানো কান্না, কান্নার ভান, কপট কান্না
- রাক্ষসী মায়া – মারাত্মক ছলনা
মুখ:
- উটকোমুখো – কিম্ভূতদর্শন, কদাকার
- ঘরমুখী/ঘরমুখো – গৃহাসক্ত
- দুমুখো – স্ববিরোধী ভাবযুক্ত, সুবিধাবাদী (দুমুখো নীতি)
- দুমুখো সাপ – দুজনকে দুরকম কথা বলে শত্রুতা সৃষ্টিকারী
- নাকেমুখে গোঁজা – তাড়াহুড়ো করে খাওয়া
- পঞ্চমুখ – মুখর
- মুখ উজ্জ্বল করা – গৌরবমণ্ডিত করা
- মুখ খিঁচানো – ভ্যাংচানো। বিকৃত মুখভঙ্গি সহকারে তিরস্কার করা
- মুখ খিস্তি – অশ্লীল বাক্য, গালাগালি
- মুখ খোলা – প্রতিবাদ করা। প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা
- মুখ চলা – অনর্গল কথা বলা। বিরামহীনভাবে খাওয়া। তিরস্কার করা
- মুখ চাওয়া – প্রত্যাশি হওয়া। সম্মান করা
- মুখ চুন – মলিন মুখ
- মুখ তোলা – প্রসন্ন দৃষ্টিপাত করা
- মুখ থাকা – সম্মান রক্ষা হওয়া
- মুখ দেখা – বিবাহে পাত্রী দেখে আশীর্বাদ করা
- মুখ ফোটা – কথা বলা
- মুখ ফোলানো – মুখ গোমড়া করা
- মুখ বুজে সহ্য করা – নীরবে সহ্য করা
- মুখ ভার করা – মুখ গম্ভীর করা, বিরূপ ভাব প্রকাশ করা
- মুখ রাখা – সম্মান রক্ষা করা
- মুখ শুকানো – মুখমণ্ডল বিবর্ণ বা ম্লান হওয়া
- মুখ সামলানো – সতর্ক হয়ে কথা বলা
- মুখ সিটকানো – ঘৃণা বিতৃষ্ণা বা অপছন্দ হওয়ার কারণে মুখ বিকৃত করা
- মুখ হওয়া – গালিগালাজ করতে অভ্যস্ত হওয়া
- মুখ-আলগা – ভালোমন্দ নির্বিশেষে যা মুখে আসে তাই বলে এমন
- মুখচন্দ্র – চাঁদের মতো সুন্দর মুখ
- মুখচোরা – অল্প কথা বলে এমন, লাজুক
- মুখবন্ধ – ভূমিকা, অবতরণিকা
- মুখরক্ষা – সম্মান বা মর্যাদা রক্ষা
- মুখরোচক – সুস্বাদু
- মুখসর্বস্ব – কাজের চেয়ে কথা বলায় পটু এমন, বাক্পটু
- মুখস্থবিদ্যা – মর্ম না বুঝে কেবর মুখস্থ করে অর্জিত বিদ্যা
- মুখিয়ে থাকা – ব্যাকুল হয়ে থাকা
- মুখে আগুন – মৃত্যু কামনাসূচক তিরস্কার
- মুখে দুধের গন্ধ
- মুখে ফুলচন্দন পড়া – শুভ সংবাদের জন্য ধন্যবাদ দেয়া
- মুখেমুখে – মৌখিকভাবে, অলিখিতভাবে। মুখের ওপর, তৎক্ষণাৎ
- মুখের ওপর – সামনাসামনি। সঙ্গে সঙ্গে, তৎক্ষণাৎ
- মুখোমুখি – সামনাসামনি
- মেনিমুখো – মুখচোরা, লাজুক। ভালো মানুষের ভান করে এমন, কপট (মেনি অর্থ বিড়ালী)
- শতমুখে বলা – পুনঃপুন বলা, বাচালের মতো বারবার বলা
মূর্খ
- গোমূর্খ – গোরুর মতো নির্বোধ। অক্ষর পরিচয়হীন
- নিরেট বোকা/ মূর্খ – অত্যন্ত বোকা, গণ্ডমূর্খ
- হস্তীমূর্খ – অতিশয় মূর্খ, অত্যন্ত নির্বোধ
মেঘ:
- অতি মেঘে অনাবৃষ্টি – মেঘের আড়ম্বর হলেই বৃষ্টি হয় না
- বিনা মেঘে বজ্রপাত – আকস্মিক বিপদ
- মেঘ করা – মেঘে আকাশ ঢেকে যাওয়া
- মেঘ না চাইতেই জল – আশাতীত ফল
- মেঘে মেঘে বেলা হওয়া – বয়স বাড়া
- মেঘের ছায়া – অশুভ লক্ষণ
মেয়ে, কনে, কন্যা
- কনেদেখা – বিবাহের পূর্বে পাত্রপক্ষ কর্তৃক পাত্রী দেখার সংস্কার
- কনেদেখা-আলো, কন্যাসুন্দর-আলো – গোধূলির মৃদু সোনালি আলো, যে আলোতে সবকিছু সুন্দর দেখায়
- বরের ঘরে পিসী, কনের ঘরে মাসী – উভয় কুল রক্ষা করে চলা
- মেয়ে দেখা – বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনের উদ্দেশ্যে বরপক্ষের কনে দেখা
মোটা
- গাবদাগোবদা – স্থূল ও বেমানান, মোটাসোটা
- পেটমোটা – ভুঁড়িওয়ালা
- মাথামোটা – স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন, নির্বোধ, গোঁয়ার, একরোখা
- ল্যাজ মোটা হওয়া, লেজ মোটা হওয়া – অহংকারে লেজ ফুলে ওঠা
যম
- যমযন্ত্রণা – মৃত্যুযন্ত্রণা। মৃত্যুর মতো ভয়ংকর যন্ত্রণা
- যমের অরূচি – সহজে মরে না
- যমের দোসর – ভয়ানক লোক
রক্ত
- রক্তগঙ্গা করা – ব্যাপক রক্তপাত ও খুনোখুনি করা
- রক্ত পড়া – (সচরাচর শরীরের ক্ষতস্থান থেকে) রক্ত ক্ষরণ হওয়া
- রক্ত ভাঙা – জরায়ু থেকে অতিরিক্ত রক্তস্রাব হওয়া
- রক্তগরম করা – উত্তেজিত করা বা হওয়া
- রক্তের অক্ষরে লেখা – রক্তের বিনিময়ে কোনো কিছু অর্জনের কাহিনি, রক্ত দিয়ে লেখা
- রক্তের টান – স্বজনপ্রীতি
রং, বর্ণ
- বর্ণচোরা – ছদ্মবেশী। নিজের আসল পরিচয় গোপন করে এমন
- বর্ণচোরা আম – কপট ব্যক্তি
- রং চড়ানো/ফলানো – অতিরঞ্জিত করা
- গায়েহলুদ – বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর গায়ে হলুদ লেপনের অনুষ্ঠানবিশেষ
- লাল ফিতে – সরকারি অফিসের দীর্ঘসূত্রতা (লাল ফিতের দৌরাত্ম্য)
- লাল বাতি জ্বালানো – অসফল হয়ে ব্যাবসা গুটিয়ে ফেলা, ধ্বংস করা
- সবুজ সংকেত – অগ্রসর হওয়ার অনুমোদন বা সংকেত
- সবে ধন নীলমণি – একমাত্র সন্তান। সর্বস্ব ধন, একমাত্র ভরসা
- সাদাকথা – সরল এবং স্পষ্ট কথা
রাজা, বাদশাহ, নবাব
- আমির ওমরা – বিত্তবান বা ধনী ব্যক্তি। উচ্চপদস্থ কর্মচারী। বাদশাহী দরবারের সভাসদ
- কুঁড়ের বাদশাহ – অত্যন্ত অলস (পি-পু-ফি-শু ভুক্তিতে রয়েছে)
- খাঞ্জা খাঁ – নবাবি চালচলন
- নবাবপুত্তুর – (ব্যঙ্গার্থে) নবাবের মতো বিলাসী ও আরামপ্রিয় ব্যক্তি
- ফতো নবাব – সম্বলহীনের বড়লোকিভাব
- রাজা-উজির – ধনী ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিবর্গ
- রাজা-উজির মারা – বড়ো বড়ো কথা বলে গর্ব প্রকাশ করা, নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করা
- হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী – নির্বোধের পরামর্শে চলা নির্বোধ ব্যক্তি
রাত, নিশি, সন্ধ্যা
- কলির সন্ধ্যা – দুর্দিনের সূত্রপাত হওয়া
- তিনসন্ধ্যা – সকাল দুপুর ও সন্ধ্যা এই তিনবেলা
- দু-সন্ধ্যা – দুবেলা, দিনে ও রাতে
- নিশির ডাক – রাতে ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে যায় এমন কল্পিত প্রেত
- যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয় – যেখানে ভয়, সেখানে বিপদ হয়
- শিবরাত্রির সলতে – একমাত্র সন্তান, একমাত্র জীবিত বংশধর
রাবণ
- রাবণের গোষ্ঠী – বড় পরিবার
- রাবণের চিতা – সহজে প্রশমিত হয় না এমন অনন্ত যন্ত্রণা, চির অশান্তি
- রাবণের পুরি – বহু সদস্যভুক্ত যৌথ পরিবার
রাস্তা, পথ
- অমৃতপথযাত্রী – মৃত্যুপথযাত্রী
- এক ডাকের পথ – কাছাকাছি
- পথ করা – যাতায়াতের পথ সুগম করা। উপায় চিন্তা করা
- পথ চাওয়া – আগমনের প্রতীক্ষা করা, কোনোকিছুর জন্য অপেক্ষা করা
- পথ জোড়া – পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, বাধা দেওয়া
- পথ দেওয়া – পথ ছাড়া, সরে গিয়ে অন্যের জন্য পথ করে দেওয়া
- পথ দেখা – উপায় চিন্তা করা। (ব্যঙ্গার্থে) প্রস্থান করা
- পথ দেখানো – উপায় বাতলানো। (ব্যঙ্গার্থে) বিদায় করা
- পথ ধরা – নির্দিষ্ট পথে অগ্রসর হওয়া। ঠিক পথে আসা
- পথ মাড়ানো – সংস্রবে যাওয়া, সম্পর্ক রাখা
- পথে আসা – প্রকৃত পথ অবলম্বন করা। বিরোধিতা ত্যাগ করা। বশীভূত হওয়া
- পথে কাঁটা দেওয়া – পথে বাধা সৃষ্টি করা
- পথে বসা – সর্বস্বান্ত হওয়া
- পথের কাঁটা – এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা
- পথের পথিক – অন্য কারো মত বা পথ অবলম্বনকারী
- রাস্তা দেখানো – উপায় বাতলানো
- রাস্তা ধরা – চলতে আরম্ভ করা। পদাঙ্ক অনুসরণ করা
রাহু
- রাহুগ্রস্ত – অত্যন্ত বিপন্ন। অসাধু লোকের কবলে পড়েছে এমন
- রাহুমুক্ত – দুর্ভাগ্যের কবল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত
- রাহুর দশা – দুঃসময়, অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা
লক্ষ্মী, অলক্ষ্মী
- অলক্ষ্মীতে পাওয়া – বারবার দুর্দশাগ্রস্ত হওয়া
- অলক্ষ্মীর দশা – শ্রীহীনতা। দারিদ্র্য
- অলক্ষ্মীর দৃষ্টি – অভাব-অনটন, দুর্দশা, দুর্ভাগ্য
- ঘরের লক্ষ্মী – লক্ষ্মীরূপ বধূ বা স্ত্রী
- লক্ষ্মীর বরযাত্রী – সুসময়ের বন্ধু
- হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা – হেলায় সুযোগ হারানো
লঙ্কা
- অতি দর্পে হত লঙ্কা – অহংকার পতনের মূল
- কালনেমির লঙ্কাভাগ – মাত্রাতিরিক্ত আশা করে নিরাশ হওয়া
- লঙ্কা পায়রা – কুচক্রী
- লঙ্কাকাণ্ড – হুলুস্থুল কাণ্ড, বিপর্যস্ত অবস্থা, তুমুল কাণ্ড (রামায়ণে বর্ণিত লঙ্কা ধ্বংসের অধ্যায়)
লবণ, নুন, নিমক
- কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা – ব্যথার উপর ব্যথা দেয়া
- তেল নুন লাকড়ি – মোলিক প্রয়োজন
- নিমক খাওয়া – অন্যের দ্বারা উপকৃত হওয়া
- নুন খাওয়া – অন্যের দ্বারা উপকৃত হওয়া
লম্বা
- লম্বা করা – প্রসারিত করা, দীর্ঘায়িত করা, বাড়ানো
- লম্বা চাল – অতিরিক্ত আড়ম্বর প্রদর্শন
- লম্বা দেওয়া – চম্পট দেওয়া
- লম্বা দৌড় – বিরতিহীন দৌড়
লাঠি
- যার লাঠি তার মাটি – জোর যার মুল্লক তার
- সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে – উভয় কুল রক্ষা
লেখা
- কাঁচা লেখা – নিম্নমানের রচনা
- খাতা লেখা – দৈনিক আয়ব্যয় বা কেনাবেচার বিবরণ খাতায় লিপিবদ্ধ করা
- নাম লেখানো – লিপিবদ্ধ করানো
- পত্র লেখা – চিঠি লেখা
- রক্তের অক্ষরে লেখা – রক্তের বিনিময়ে কোনো কিছু অর্জনের কাহিনি, রক্ত দিয়ে লেখা
লেজ/ল্যাজ:
- লেজে পা পড়া – স্বার্থে আঘাত লাগা
- লেজ মোটা হওয়া – অহংকারে লেজ ফুলে ওঠা
- লেজকাটা – মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে এমন
- লেজ গুটানো – পরাজয় মেনে নেওয়া
- লেজেগোবরে করা – অক্ষমতার জন্য বিপর্যস্ত অবস্থায় উপনীত হওয়া, বিতিকিচ্ছিরি অবস্থাযুক্ত
- শুয়ে শুয়ে লেজ নাড়া
শাক
- বোঝার উপর শাকের আঁটি – অতিরিক্তের অতিরিক্ত
- শাক দিয়ে মাছ ঢাকা – দোষ গোপনের বৃথা চেষ্টা
শিকা, শিকে
- বিড়ালের ভাগ্যে শিকা ছেঁড়া – ভাগ্যক্রমে বিনা চেষ্টাতে বাঞ্ছিত বস্তু লাভ
- শিকেয় তোলা – অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত বা মুলতুবি রাখা
শিক্ষক, গুরু
- গুরুদক্ষিণা – দীক্ষা ও অধ্যয়ন সমাপ্তির পর গুরুকে নিবেদিত উপচার
- গুরুমারা বিদ্যা – গুরুর কাছে শেখা যে বিদ্যা গুরুর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়
- নাটের গুরু – মূলনায়ক, প্ররোচনাকারী, অকল্যাণের মূল
- টুলো পণ্ডিত – (অবজ্ঞাসূচক) টোলের শিক্ষক, কেতাবি বিদ্যায় শিক্ষিত হলেও ব্যাবহারিক জগতে অনভিজ্ঞ ব্যক্তি
শিব
- ধান ভানতে শিবের গীত – অপ্রাসঙ্গিক কথার অবতারণা
- শিব গড়তে বাঁদর গড়া – খুব ভালো কিছু করতে গিয়ে খুব খারাপ কিছু করে ফেলা
- শিবত্বপ্রাপ্তি – মৃত্যু, পরলোকগমন
- শিবরাত্রির সলতে – একমাত্র সন্তান, একমাত্র জীবিত বংশধর
শিয়াল, শেয়াল
- শিয়ালফাঁকি – মৃত্যুর ভান করে প্রতারণা
- শিয়ালের যুক্তি – অকেজো যুক্তি
- সব শেয়ালের এক রা
শ্রাদ্ধ
- টাকার শ্রাদ্ধ – অর্থের অপচয়
- ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ – অপব্যয়
- শ্রাদ্ধ গড়ানো – বিশৃঙ্খল ও অবাঞ্ছিত ব্যাপার দীর্ঘায়িত হওয়া
সময়, কাল, বেলা
- অকালকুষ্মাণ্ড – মূর্খ, অপদার্থ, অকর্মা, অকর্মণ্য (শাব্দিক আর্থ:- অকালে জাত কুমড়ো)
- অকালবোধন – অসময়ে জাগরিতরকণ
- অকালে বাদলা – অপ্রত্যাশিত বাধা
- অন্তিমকাল – মৃত্যুকাল, শেষ সময়
- অন্তিমসময় – মৃত্যুকাল, শেষ সময়
- কাকভোর – খুব সকাল
- কাল কাটানো – কাল ক্ষেপণ করা। জীবনযাপন করা
- কালনেমির লঙ্কাভাগ – মাত্রাতিরিক্ত আশা করে নিরাশ হওয়া
- কালেভদ্রে – কখনো-সখনো, কদাচিৎ
- ছেলেবেলা – বাল্যকাল, ছোটোবেলা
- প্রকাশ্য দিবালোকে – দিনের বেলায় ও জনসমক্ষে
- বেলা করা – দেরি করা
- বেলা পড়া – বিকেল বা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা
- মরার সময় মকরধ্বজ – শেষ প্রচেষ্টা
- মান্ধাতার আমল – অতি প্রাচীনকাল
- মেঘে মেঘে বেলা হওয়া – বয়স বাড়া
- রাক্ষসী বেলা – দিনের শেষ আড়াই ঘণ্টা সময়
- সকাল সকাল – অবিলম্বে, দেরি না করে। বেলা থাকতে থাকতে
সম্পর্ক
- অহিনকুল সম্পর্ক/ সম্বন্ধ – শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক, ভীষণ শত্রুতা
- গলায় গলায় ভাব / গলাগলি ভাব – অতিশয় আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক
- দা-কুমড়া সম্পর্ক – শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক
- ভাশুর-ভাদ্রবউ সম্পর্ক – দুজনের মধ্যে সরাসরি বাক্যালাপ কাঙ্ক্ষিত নয় এমন সম্পর্ক
সংখ্যা
সাত, সপ্তম
- সপ্তমে চড়া – প্রবল উত্তেজনা
- সাত কাণ্ড রামায়ণ – বিরাট ব্যাপার, এলাহি কাণ্ড
- সাত তাড়াতাড়ি – ব্যতিব্যস্ত হয়ে। অতি দ্রুত, খুব শীঘ্র
- সাতকথা – নানা কথা
- সাতকাহন – অসংখ্য, অন্তহীন
- সাতখুন মাপ/মাফ – গুরুতর অপরাধ সত্ত্বেও শাস্তির পরিবর্তে অতিরিক্ত প্রশ্রয়দান
- সাতপাঁচ ভাবা – অগ্রপশ্চাৎ নানা বিষয়ে ভাবা, নানারকম চিন্তা করা
- সাতসতেরো – নানারকম কথা। বিবিধ উপকরণ
- সাতসমুদ্র, সাতসমুদ্দুর – অত্যন্ত দূরবর্তী
- সাতেও না পাঁচেও না – নির্লিপ্ত
সাপ:
- অজগরবৃত্তি – আলসেমি
- অহিনকুল সম্পর্ক/ সম্বন্ধ – শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক, ভীষণ শত্রুতা
- কেঁচো খুঁড়তে সাপ – সামান্য থেকে অসামান্য পরিস্থিতি
- দুমুখো সাপ – দুজনকে দুরকম কথা বলে শত্রুতা সৃষ্টিকারী
- দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা – শত্রুকে সযত্নে লালনপালন করা
- সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে – উভয় কুল রক্ষা
- সাপে নেউলে – সাপ আর নেউলের সম্পর্কের মতো চিরবৈরিতার সম্পর্ক, পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন
- সাপের ছুঁচো গেলা – উভয়সংকটে পড়া
- সাপের ছুঁচো পা দেখা – গর্বে অন্ধ হওয়া
- সাপের পাঁচ পা দেখা – দর্প বা অহংকারের বাড়াবাড়ি
সুখ, আহ্লাদ
- আহ্লাদে আটখানা – অত্যন্ত খুশি
- আহ্লাদ দেওয়া – প্রশ্রয় দেওয়া
- সুখে থাকতে ভূতে কিলায় – স্বেচ্ছায় দুঃখ বরণকারী
- সুখের পায়রা – সুসময়ের বন্ধু
- হরিষে বিষাদ – আনন্দঘন পরিবেশের অপ্রত্যাশিত দুঃখজনক সমাপ্তি, আনন্দে বিষাদ
সেপাই:
- তালপাতার সেপাই – লম্বা ও অত্যন্ত কৃশ ব্যক্তি, অতিশয় রোগা ও দুর্বল ব্যক্তি
- নামকাটা সেপাই – কর্মচ্যুত ব্যক্তি
সোনা, স্বর্ণ
- সুবর্ণ সুযোগ, স্বর্ণসুযোগ – বিরল সুযোগ, অতি উৎকৃষ্ট সুযোগ, golden opportunity
- সোনায় সোহাগা – মানানসই হওয়া, মণিকাঞ্চন যোগ
- সোনার কাঠি রূপার কাঠি – বাঁচা-মরার বস্তু
- সোনার পাথরবাটি – অসম্ভব বস্তু
হাট
- চাঁদের হাট – প্রিয়জনের সমাগম। আনন্দের প্রাচুর্য
- মেছো হাটা
- হাট করা – উন্মুক্ত করা, খোলা। বিশৃঙ্খলা বা এলোমেলো করা, হট্টগোল করা
- হাট বসা – বহুজনের সমাবেশ হওয়া। হট্টগোল করা
- হাটে হাঁড়ি ভাঙা – গোপন কথা প্রকাশ করা (হাঁড়ি ভাঙা ভুক্তিতে রয়েছে)
হাত:
- অন্ধকারে হাতড়ানো – অনুমানের ওপর নির্ভর করে খোঁজা
- আকাশ হাতে পাওয়া – দুর্লভ বস্তু লাভের আশ্বাস পাওয়া
- এক হাত লওয়া – প্রতিশোধ নেয়া
- কাঁচা হাত – অপক্ব
- গায়ে হাত তোলা – প্রহার করা, মারধর করা
- চাঁদ হাতে পাওয়া – আশাতীত দুর্লভ বস্তু পাওয়া
- ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা – সামান্য স্বার্থে দুর্নাম অর্জন
- ছেলের হাতের মোয়া – সহজলভ্য বস্তু
- ঝাড়া হাত পা – ঝামেলাশূন্য
- ডান হাতের ব্যাপার – খাওয়া, ভোজন
- দক্ষিণহস্ত – প্রধান সহায় (শাব্দিক অর্থ ডান হাত)
- দক্ষিণহস্তের ব্যাপার – ভোজন, আহার
- বাম/বাঁ হাতের ব্যাপার – ঘুস গ্রহণ
- বামন হয়ে চাঁদে হাত – অসম্ভব কিছু পাওয়ার চেষ্টা
- মাথায় হাত – হতাশা বিস্ময় প্রভৃতি কারণে হতচকিতবোধ
- মাথায় হাত বুলানো – কৌশলে বা ফাঁকি দিয়ে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা করা। আদর করা
- মুক্তহস্ত – দানশীল, উদার
- হাত আসা – অভ্যাস বা রপ্ত হওয়া
- হাত ওঠানো – প্রহার করতে উদ্যত হওয়া
- হাত কচলানো – ক্রমাগত দুই হাত রগড়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা
- হাত করা – বশে আনা, আয়ত্ত করা। হস্তগত করা
- হাত কামড়ানো – বঞ্চিত হয়ে আফসোস করা
- হাত গুটানো – নিরস্ত হওয়া, নিজেকে যুক্ত না করা
- হাত গোনা – হাতের রেখা দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করা
- হাত চলা – প্রহার করা
- হাত চালা – চোর ধরার জন্য কল্পিত মন্ত্রবলে হাত চালনা করা
- হাত চালানো – তাড়াতাড়ি করা
- হাত চুলকানো – কোনো কিছু করার জন্য আস্থিরতা প্রকাশ করা
- হাত জুড়ানো – স্বস্তি লাভ করা
- হাত জোড়া থাকা – কর্মব্যস্ত থাকা
- হাত দিয়ে হাতি ঠেলা – অসম্ভকে সম্ভব করতে চেষ্টা করা
- হাত দেওয়া – সূচনা করা
- হাত দেখা – হাতের তালুর রেখা দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করা
- হাত ধরা – নির্ভর করা
- হাত ধুয়ে বসা – আশা ত্যাগ করা। নিশ্চিত বোধ করা
- হাত ধোয়া – সংস্রব ত্যাগ করা
- হাত পাকানো – অভ্যাসদ্বারা দক্ষতা অর্জন করা
- হাত পাতা – সাহায্য চাওয়া, ভিক্ষা চাওয়া
- হাত বাড়ানো – লোভ করা
- হাত লাগানো – কাজে প্রবৃত্ত হওয়া
- হাতকষা – কৃষণ
- হাতখরচ – বিবিধ ব্যক্তিগত ব্যয়
- হাতখালি – নিঃস্ব
- হাতখালি করা – রিক্তহস্ত বা নিঃস্ব হওয়া
- হাতখোলা – মুক্তহস্ত। দাতা, দানশীল
- হাতচিঠা – প্রাপ্তিস্বীকারপত্র, রসিদ
- হাতছাড়া – অধিকারচ্যুত, বেহাত
- হাতছানি – হাত নেড়ে ইঙ্গিত প্রদান। আহ্বান
- হাতজোড় করা – মিনতি করা।
- হাতটান – কৃপণতা, কিপটেমি। ছিঁচকে চুরির অভ্যাস
- হাততোলা – প্রহার করতে উদ্যত হওয়া
- হাতধরা – বশীভূত, অধীন, বশবর্তী
- হাত-পা ছেড়ে দেওয়া – নিশ্চেষ্ট হওয়া, হতাশ হওয়া
- হাতবদল – হস্তান্তর
- হাতভারী – কৃপণ, ব্যয়কুণ্ঠ
- হাতসাফাই – চুরি। হাতের ছলাকলা, হাতের পটুতা
- হাতে গড়া – হাতে তৈরি করা
- হাতে ধরা – বিশেষভাবে অনুরোধ বা মিনতি করা
- হাতে পাওয়া – আয়ত্তে পাওয়া
- হাতে হাতে – সঙ্গে সঙ্গে, তৎক্ষণাৎ
- হাতেকলমে – নিজ হাতে বা প্রত্যক্ষভাবে
- হাতেখড়ি – কোনো কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা
- হাতেখোলা – সর্বস্বান্ত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন
- হাতেনাতে – অপরাধের প্রমাণ-সহ
- হাতের পাঁচ – শেষ সম্বল
- হাতের পুতুল – যাকে দিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করানো যায়
- হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা – হেলায় সুযোগ হারানো
হাতি, হস্তী
- অন্ধের হাতি দেখা – অল্প জ্ঞান লাভ করে বিজ্ঞের মতো অভিমত
- গজকচ্ছপের লড়াই – প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা
- গজদন্তমিনারবাসী – কল্পনাবিলাসী
- গজেন্দ্রগমন – হাতির মতো ছন্দময় ও মন্থর গতি, মৃদু মন্থর গমন। আলসেমি
- দুয়ারে হাতি বাঁধা – ঐশ্বর্যের দম্ভ প্রকাশ করা
- শ্বেতহস্তী পোষা – অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়সাপেক্ষ পদক্ষেপ করা
- হস্তীমূর্খ – অতিশয় মূর্খ, অত্যন্ত নির্বোধ
- হাত দিয়ে হাতি ঠেলা – অসম্ভকে সম্ভব করতে চেষ্টা করা
- হাতি পোষা – অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য কাজ করা
- হাতির খোরাক – ব্যয়সাধ্য দ্রব্যসামগ্রীর জোগান। বিরাট খরচ
- হাতির পাঁচ পা দেখা – অহংকার বোধ করা। দুঃসাহসী হওয়া
হাসি
- কাষ্ঠহাসি – কৃত্রিম হাসি, শুকনো হাস
- ক্যাবলাহাসি – বোকা বোকা হাসি
- চড়ুকে হাসি – কৃত্রিম হাসি। অট্টহাসি
- দেঁতো হাসি – কৃত্রিম হাসি
হাড়:
- হাড় কালি হওয়া – অত্যন্ত দুঃখকষ্ট ভোগ করা। অতিরিক্ত পরিশ্রমে নির্জীব হয়ে পড়া
- হাড় জুড়ানো – স্বস্তি লাভ করা, শান্তি পাওয়া
- হাড় জ্বালানো – ক্রমাগত জ্বালাতন করা
- হাড়কিপটে – অতি কৃপণ স্বভাববিশিষ্ট, হাড়কৃপণ
- হাড়কৃপণ – অতি কৃপণ স্বভাববিশিষ্ট, হাড়কিপটে
- হাড়জিরজিরে – কঙ্কালসার
- হাড়জ্বালানো – সারাক্ষণ জ্বালাতন বা উপদ্রব করে এমন
- হাড়পাকা – পাকামিতে সিদ্ধহস্ত
- হাড়ভাঙা – কঠোর ও শ্রমসাধ্য
- হাড়হদ্দ – আগাগোড়া। নাড়িনক্ষত্র
- হাড়হাভাতে – সম্পূর্ণ নিঃস্ব, লক্ষ্মীছাড়া
- হাড়ে দূর্বা গজানো – অত্যন্ত কুঁড়ে
- হাড়ে বাতাস লাগা – শান্তি পাওয়া
- হাড়ে হাড়ে চেনা – ভালোভাবে চেনা
হাঁড়ি
- তেলো হাঁড়ি – গম্ভীর
- হাঁড়ি ঠ্যালা – রান্নাবান্নার মতো একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর সাংসারিক দায়িত্ব পালন করা
- হাঁড়ি ভাঙা – গোপন কথা প্রকাশ করা (হাটে হাঁড়ি ভাঙা)
- হাঁড়ির খবর – ভেতরের খবর
- হাটে হাঁড়ি ভাঙা – গোপন কথা প্রকাশ করা (হাঁড়ি ভাঙা ভুক্তিতে রয়েছে)