বিয়ের মাধ্যমে নরনারীর জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এর মাধ্যমে দুটি হৃদয় বৈধভাবে পরস্পরের কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়। বিয়ের পর নবদম্পতির প্রথম মধুময় রাতকে বাসর রাত বলা হয়।
বাসর রাতের করণীয় সম্পর্কে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন। তা সত্ত্বেও লজ্জার কারণে কারও কাছ থেকে পরামর্শ চাইতে পারেন না। ফলে বৈবাহিক জীবনের এতো গুরুত্বপূর্ণ প্রথম রাতটি হেলায় অতিবাহিত হয়ে যায়। যেহেতু এ রাতটি আর দশটি রাতের মতো নয়, তাই শুধু ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দেয়া ঠিক নয়। তাই সকল নবদম্পতিদের উদ্দেশ্যে এ নিবন্ধটির অবতারণা করা হয়েছে।
১। সালাম বিনিময়:
বাসর ঘরে ঢুকে প্রথমেই সালাম বিনিময় করা উচিত। বাসর ঘরে স্ত্রী আগে থেকেই উপস্থিত থাকলে, স্বামী তাকে সালাম দিয়ে ঢুকবে। আর স্বামী আগে থেকেই উপস্থিত থাকলে, স্ত্রী স্বামীকে সালাম দিয়ে ঢুকবে।
২। নামায আদায়:
এরপর দুজনে কুশল বিনিময় করে দুই রাকাআত শোকরানা নামায আদায় করবে। নামাযে স্বামী সামনে থাকবে এবং স্ত্রী পিছনে থাকবে।
৩। মুনাজাত করা:
নামাযের পর স্বামী-স্ত্রী নিজেদের বৈবাহিক জীবনের সুখ-শান্তি, সৎ ও নেককার সন্তান চেয়ে এবং অন্যান্য বিষয়ে দুআ করবে। মুনাজাত একসাথে কিংবা আলাদা করা যায়। একসাথে করলে স্বামী মুনাজাতে কিছু চাইবে এবং স্ত্রী তার সাথে সাথে আমীন বলবে।
৪। স্ত্রীর কল্যাণ চেয়ে দুআ:
স্ত্রীর কপালের কিছু চুল আলতো করে ধরে নিচের দুআ’টি বলবে। দুআ’র পর স্ত্রীর কপালে ভালোবাসার চুমু দেয়া যেতে পারে।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।
৫। স্ত্রীকে হাদিয়া দেয়া:
বাবা-মা, ভাই-বোন, চেনা পরিবেশ ইত্যাদি ছেড়ে এসে স্ত্রী বেচারি মানসিকভাবে খুবই কষ্টে থাকে। তাই তাকে কিছু হাদিয়া দিয়ে ও খোশগল্প করে কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করা উচিত। হাদিয়া হিসেবে জায়নামাজ, মেসওয়াক, তসবিহ ও ইসলামি বই দেয়া যায়।
৬। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া পোক্ত করা:
এবার স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে গভীরভাবে জানার পালা। আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরের ভালোলাগা, মন্দলাগা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে নিবে যেন সে অনুযায়ী দুজনে একসাথে চলতে পারে। এতে করে বৈবাহিক জীবনের অনেক জটিল ও কঠিন সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
৭। সহবাস করা:
কথাবার্তার মাধ্যমে দুজনের মধ্যে গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি হলে এবং সহবাসে ইচ্ছা জাগলে সহবাস করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় সহবাস করা জায়েজ নয়। স্ত্রী-সহবাসের আগে নিচের দুআ’টি করতে হয়।
بِسْمِ اللّٰهِ اَللّٰهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
অর্থ: আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যা রিযক দিবেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন।
রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দাম্পত্য মিলনের পূর্বে যদি কেউ এ কথা বলে তবে তাদের মিলনে সন্তান জন্ম নিলে তাকে শয়তান ক্ষতি করবে না।
৮। ফরজ গোসল আদায়:
সহবাসের পর দুজনেরই ফরজ গোসল করে নিতে হবে। ফরজ গোসলে আবশ্যিকভাবে তিনটি কাজ করতে হয়। এগুলো হলো:-
- গড়গড়া সহ কুলি করা।
- নাকের নরম অংশে পানি পৌঁছানো।
- সমস্ত শরীর ভালোভাবে ধৌত করা যেনো চুল ও লোমের গোড়াতেও পানি যায়।
উক্ত তিনটি কাজের যেকোনো একটি বাদ পড়লে ফরজ গোসল আদায় হবে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মাথার একটি চুলের গোড়া কিংবা শরীরের একটি পশমের গোড়া পরিমাণ জায়গা শুকনা থাকলে ফরজ গোসল আদায় হবে না এবং শরীর পবিত্রও হবে না। আর আমরা জানি, পবিত্র না হয়ে নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি আমলগুলো করা যায় না।
তাই সতর্কতার সাথে ফরজ গোসল আদায় করা উচিত। ফরজ গোসল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নির্ভরযোগ্য কোনো ইসলামি বই দেখতে পারেন। মাসআলা-মাসায়েল ও অন্যান্য জিজ্ঞাসার জন্য বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জাযাকাল্লাহ খায়ের