গল্প তো হবেই। চলো তার আগে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি হাদীস জেনে নিই।
হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই এরশাদ করিতে শুনিয়াছি যে, মুয়াযযিন কিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা লম্বা ঘাড়ওয়ালা হইবে। (মুসলিম)
দেখেছো, মুয়াজ্জিনের কত ফজিলত। যাই হোক, তোমরা হয়তো জানো যে, আমরা যারা সাধারণ মানুুষ, তারা পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারি না। পশুপাখি তো দূরের কথা, না শিখে আমরা বিদেশি মানুষের ভাষাও বুঝি না। আল্লাহ তাআলা বাদশাহ সুলাইমান আলাইহিস সালামকে পশুপাখির ভাষা বোঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। পশুপাখির ভাষা বুঝি না বলে তাদের সাথে কথাও বলতে পারি না। কিন্তু জানো কি, গল্পে মানুষ, পশুপাখি, দৈত্য — সবাই সবার ভাষা বোঝে! তো কথা আর না বাড়িয়ে চলো এখন গল্প শুরু করা যাক।
এক গ্রামে ছিলো এক গৃহস্থ। গৃহস্থ কাদের বলে জানো তো? যে গ্রামে বাস করে, চাষবাস করে, অতি সাধারণ জীবন যাপন করে, তাদেরকে গৃহস্থ বলে। তো গৃহস্থের বিভিন্ন গৃহপালিত পশুপাখি ছিলো। সেসবের মধ্যে ছিলো একটি মোরগ। শীত আর গ্রীষ্ম নেই, মোরগ প্রতিদিন ভোরবেলা উচ্চস্বরে “কুক্ কুরু কুক্” ডেকে উঠতো আর গৃহস্থের ঘুম ভেঙে যেতো। এতো ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়াতে গৃহস্থ খুব বিরক্ত হতো।
একদিন গৃহস্থ ভাবলো, মোরগ প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। ওকে শায়েস্তা করা দরকার। মোরগকে কয়েকদিন বেঁধে রাখল, আর কোনো খাবার দিলো না। না খেয়ে মোরগ খুব কষ্ট পেলো, দুর্বল হয়ে গেলো। কিন্তু তবুও ভোরবেলা ডাকাডাকি করা ছাড়লো না।
গৃহস্থ বুঝলো মোরগকে শাস্তি দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। মোরগের কষ্ট দেখে তার মায়া হলো। তখন সে মোরগকে ডেকে বললো, এই মোরগ! তুমি প্রতিদিন ভোরবেলা ডেকে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দাও কেনো? মোরগ বললো, আমি আপনার ঘুম ভাঙিয়ে দিই, যেনো আপনি ফজরের নামাজ পড়তে অবহেলা না করেন। শয়তান এ সময় আপনাকে ধোঁকা দিতে আসে। আর আমি তা অনুধাবন করতে পারি।
এ কথা শুনে গৃহস্থ বললো, তুমি ছাড়া তো আরো অনেক পশুপাখি আমার ঘরে আছে। ওরা ডেকে দেয় না কেন? উত্তরে মোরগ বললো, আমি তো আসলে আযান দিই। আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করি। কিন্তু আপনি তা বুঝতে পারেন না। ভাবেন, অযথা ডাকাডাকি করছি। আর আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, কোনো জামাতে আজানদাতা অর্থাৎ মুয়াজ্জিন একজনই হয়।
তখন গৃহস্থ বললো, আজান দেয়ার সময় তুমি তোমার ঘাড় উঁচু করো কেনো? মোরগ বললো, কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিন সবচে’ লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট হবে। সে খুশিতে আমি ঘাড় উঁচু করি।
মোরগের বুদ্ধিদীপ্ত জবাব শুনে গৃহস্থের মন ভরে গেলো। সে তার ভুল বুঝতে পারলো। বললো, তুমি এখন থেকে আমাকে অবশ্যই ডেকে দিবে। পুরস্কার হিসেবে তোমাকে আরো ভালো ভালো খাবার দিবো। তখন থেকে মোরগ আরো দ্বিগুণ উৎসাহে গৃহস্থকে ডেকে দিতে লাগলো।
নোট:
- ফাতিমা ঘুমের আগে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনতে চায়। ওকে গল্পটি প্রথম শুনিয়েছিলাম ১২.০৪.২০২০ ইং তারিখে। ওটাকেই ঘষামাজা করে প্রকাশ করা হলো।
- দারুল কিতাব থেকে প্রকাশিত হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্ধলভী (রহঃ)-এর মুন্তাখাব হাদীস-এর বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ১৯৪ থেকে হাদিসটি নেয়া হয়েছে।