স্বপ্নের পদ্মা সেতু, এখন আর স্বপ্ন নয় – বাস্তব। এর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সীগঞ্জের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছ, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সরাসরি সংযোগ ঘটেছে। সেতুটি চালুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষসহ গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অধ্যায় রচিত হবে। জাতীয় অর্থনীতির চাকায় গতি বাড়বে।
এক নজরে পদ্মা সেতু:
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। এটি একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির (truss bridge) ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ রয়েছে। নিচে পদ্মা সেতু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
নকশাকারী প্রতিষ্ঠান | AECOM |
মূল সেতু নির্মাণকারী | চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিঃ (MBEC), চীন |
নদী শাসনের কাজ | সিনো হাইড্রো করপোরেশন, চীন |
মোট স্প্যান | ৪১টি |
প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য | ১৫০ মিটার |
মোট পিলার | ৪২টি। এর মধ্যে ৪০টি নদীতে। দুটি নদীর তীরে। |
পাইলের সংখ্যা | ২৯৪টি |
মূল সেতুর দৈর্ঘ্য | ৬.১৫ কিলোমিটার |
সেতুর প্রস্থ | ১৮.১০ মিটার |
সড়কের লেন | ৪টি |
ল্যাম্পপোস্টের সংখ্যা | ৪১৫টি |
স্তর/তলা | বাংলাদেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ রয়েছে। |
সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান | কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন (KEC), দক্ষিণ কোরিয়া। |
দুই প্রান্তের সংযোগ স্থান | মাওয়া (লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ) এবং জাজিরা (শরীয়তপুর) |
ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রা | রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রা। CA Jul-22, p-6 |
আয়ুষ্কাল | ১০০ বছর। |
প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় | ১০,১৬১.৭৫ কোটি টাকা। (২০০৭ সালে প্রকল্প অনুমোদনের সময়) ৩০,১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। (২০১৮ সালের সংশোধিত প্রাক্কলন) |
প্রকৃত ব্যয় | ২৭,৭৩২.০৮ কোটি। CA Jul-22, p-4 |
পদ্মা সেতুর ঘটনাপ্রবাহ:
৪ জুলাই ২০০১ | প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মাওয়া পয়েন্টে প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন |
সেপ্টেম্বর ২০১১ | দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে |
২৯ জুলাই ২০১২ | বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় |
১৮ জুন ২০১৪ | মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। |
৭ ডিসেম্বর ২০১৪ | পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু। |
১২ ডিসেম্বর ২০১৫ | প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। |
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ। |
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়। জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নং খুঁটির ওপর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। |
২৭ জানুয়ারি ২০১৮ | পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান বসানো হয় ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে। |
১১ মার্চ ২০১৮ | পদ্মা সেতুর তৃতীয় স্প্যান বসানো হয় ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটিতে। |
১৩ মে ২০১৮ | পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয় ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটিতে। |
২৯ জুন ২০১৮ | পদ্মা সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটিতে। জাজিরা প্রান্তের তীর স্পর্শ করে। |
১৪ অক্টোবর ২০১৮ | ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ’ প্রকল্প উদ্বোধন। |
১০ ডিসেম্বর ২০২০ | পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান, অর্থাৎ ৪১ তম স্প্যান বসানো হয় ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটিতে। এর মাধ্যমে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়। |
২২ জুন ২০২২ | পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে সেতু হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিঃ (MBEC) |
২৩ জুন ২০২২ | পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত সর্বোচ্চ গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা সহ আরো কিছু নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি। |
২৫ জুন ২০২২ | পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা ১১ আষাঢ় ১৪২৯। |
২৬ জুন ২০২২ | ভোর ৬টা থেকে সর্বসাধারণের জন্য পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হয় |
পদ্মা সেতুর টোল হার:
১৭ মে, ২০২২ তারিখে পদ্মা বহুমুখী সেতুর টোল হার নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী পদ্মা সেতুর টোল হার নিম্নরূপ:
যানবাহন | টোল (টাকা) |
মোটরসাইকেল | ১০০/- |
কার/জিপ | ৭৫০/- |
পিকআপ | ১,২০০/- |
মাইক্রোবাস | ১,৩০০/- |
ছোট বাস (৩১ আসন পর্যন্ত) | ১,৪০০/- |
মাঝারি বাস (৩২ বা তার বেশি আসন) | ২,০০০/- |
বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) | ২,৪০০/- |
ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) | ১,৬০০/- |
মাঝারি ট্রাক (৫-৮ টন) | ২,১০০/- |
মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন) | ২,৮০০/- |
ট্রাক (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) | ৫,৫০০/- |
ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) * | ৬,০০০/- |
* ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ৬,০০০/- এর সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য ১,৫০০/- টাকা যুক্ত হবে।
পদ্মা সেতু সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য:
- পদ্মা সেতু বর্তমানে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু (৬.১৫ কিমি)। পদ্মাসেতু নির্মিত হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু ছিলো বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু (৪.৮ কিমি)।
- পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় প্রতিষ্ঠিত সেনানিবাস – শেখ রাসেল সেনানিবাস (জাজিরা, শরীয়তপুর)
- পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় প্রতিষ্ঠিত থানা – পদ্মা সেতু উত্তর থানা (মুন্সীগঞ্জ) ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা (জাজিরা, শরীয়তপুর)। ২১ জুন, ২০২২ এই থানা দুটির কার্যক্রম শুরু হয়।
- পদ্মা সেতু তৈরিতে কাজ করেছে ২৫ দেশের মানুষ। CA Jul-22, p-5, 6