করোনা সম্পর্কিত কিছু শব্দ

সর্বশেষ আপডেট:

করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব আজ টালমাটাল। এই সময়ে কিছু শব্দ বহুল আলোচিত। হয়তোবা কিছু শব্দের সাথে অনেকেই নতুন করে পরিচিত হয়েছি। এসব শব্দগুলোকে কয়েকভাবে ভাগ করা যায়। যেমন:-

করোনাকালীন উদ্ভূত নতুন শব্দ।

  • কোভিড-১৯ (COVID-19)
  • সামাজিক/শারীরিক দূরত্ব

যেকোনো সংক্রামক রোগ সম্পর্কিত শব্দ।

  • ইনকিউবেশন পিরিওড (Incubation Period)
  • কোয়ারান্টাইন (Quarantine)
  • হোম কোয়ারান্টাইন (Home Quarantine)
  • আইসোলেশন (Isolation)
  • হার্ড ইমিউনিটি (Herd Immunity)

করোনার চিকিৎসা সম্পর্কিত শব্দ।

  • পিপিই (PPE)
  • ভেন্টিলেটর
  • আইসিইউ (ICU)
  • হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন
  • প্লাজমা থেরাপি

বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ।

  • হো (WHO)
  • আইইডিসিআর (IEDCR)
  • গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

অন্যান্য কিছু শব্দ।

  • লকডাউন (Lockdown)
  • লে-অফ (কারখানা)

করোনা রোগের কয়েকটি টিকার নাম, আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠান ও দেশ:

ক্রমিকটিকার নামপ্রতিষ্ঠানদেশ
০১Bangavax (বঙ্গভ্যাক্স)গ্লোব বায়োটেকবাংলাদেশ
০২BBIBP-CorVসিনোফার্মচীন
০৩Comirnatyফাইজার ও বায়োএনটেক (Pfizer-BioNTech) 
০৪CoronaVacসিনোভ্যাক লাইফ সায়েন্সেসচীন
০৫Covaxin (কোভ্যাক্সিন)বায়োটেকভারত
০৬COVIran Barakatইরান
০৭Covishieldঅক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা 
০৮Jassenজনসন এন্ড জনসন যুক্তরাষ্ট্র
০৯Novavaxযুক্তরাষ্ট্র
১০Spikevax (mRNA-1273)মডার্না (Moderna)যুক্তরাষ্ট্র
১১Sputnik-V (স্পুটনিক-ভি)গামালিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টাররাশিয়া
১২Vaxzevriaঅক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা 
১৩iNCOVACC
পোশাকি নাম BBV154
বায়োটেক (CA Feb-23 p-26)ভারত

স্প্রের মাধ্যমে নাকে দেওয়ার প্রথম করোনা টিকা হলো ভারত বায়োটেকের iNCOVACC (CA Feb-23 p-7)

কোভিড-১৯ (COVID-19):

করোনা ভাইরাসের দ্বারা সৃষ্ট রোগের নাম কোভিড-১৯। COVID-19 এর পূর্ণরূপ হলো Corona Virus Disease 2019। CO হলো করোনা, VI ভাইরাস এবং D হলো ডিজিজ। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯-এ প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় বিধায় ১৯ সংখ্যাটি জুড়ে দেয়া হয়েছে।

ইনকিউবেশন পিরিওড (Incubation Period):

আমাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলেই যে সাথে সাথে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে এমন নয়। করোনা ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর ১ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে। এই সুপ্ত থাকার সময়টাকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিওড (Incubation Period) বা সুপ্তাবস্থা।

কোয়ারান্টাইন (Quarantine):

যখন কোনো সুস্থ ব্যক্তি, কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে, তখন তাকে অন্য সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়। তার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং সে ঐ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটাই হলো কোয়ারান্টাইন (Quarantine)। বাংলায় বলা হয় সঙ্গনিরোধ। যেমন, কেউ করোনা আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি সংস্পর্শে আসলে তাকে ১৪ (চৌদ্দ) দিন কোয়ারান্টাইনে রাখা হয় এবং দেখা হয় যে, সেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে কী না। সতর্কতাস্বরূপ এমন করা হয় যেন তার মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ না হয়।

হোম কোয়ারান্টাইন (Home Quarantine):

কোয়ারান্টাইনে থাকার কাজটা যখন কেউ নিজের বাড়িতে নির্দিষ্ট একটি ঘরে অবস্থান করে নিশ্চিত করে, তখন তাকে হোম কোয়ারান্টাইন বলে।

আইসোলেশন (Isolation):

কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে তাকে সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়। এটাকে বলে আইসোলেশন (Isolation)। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং চিকিৎসাধীন আছেন এমন ব্যক্তিকে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে অর্থাৎ আইসোলেসনে রাখা হয়।

লকডাউন (Lockdown):

কোনো জরুরি পরিস্থিতির কারণে কোনো নিদিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করাই লকডাউন (Lockdown)। বাংলায় একে বলা যেতে পারে অবরুদ্ধ। এটা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যবস্থা নয়। এটা প্রশাসনিক বা আইনগত বা সরকারি ব্যবস্থা।

হার্ড ইমিউনিটি (Herd Immunity):

কোনো জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে, ঐ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠে। করোনা রোগের ক্ষেত্রেও আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হলে, এক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করে। মাম্পস, মিজলস, স্মল পক্স ইত্যাদি ভাইরাসঘটিত অনেক রোগের ক্ষেত্রে একবার অ্যান্টিবডি তৈরি হলে ঐ রোগের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে। এটাকে বলা হয় ইমিউনিটি (Immunity)। ফলে ঐ রোগে দ্বিতীয়বার আর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আবার ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের ক্ষেত্রে ইমিউনিটি স্থায়ী নাও হতে পারে।

যাই হোক, রোগটি যদি সংক্রামক রোগ হয়, সেক্ষেত্রে কোনো এলাকায় যত বেশি মানুষ ঐ রোগে আক্রান্ত হবে, তত বেশি মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, তত বেশি মানুষ ঐ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা লাভ করবে। ফলে ঐ রোগে নতুন করে আক্রান্তের হার ক্রমশ হ্রাস পাবে। অর্থাৎ এলাকাটি ঐ রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। গণহারে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লাভের এই অবস্থাকে বলে হার্ড ইমিউনিটি।

পিপিই (PPE):

PPE-এর পূর্ণরূপ হলো Personal Protective Equipment. যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত লোকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীসমূহকে সংক্ষেপে PPE বলে। একেক পেশার ঝুঁকি একেক রকম। তাই PPEও ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকেরা ফেস শিল্ড, গগলস, মাস্ক, ওয়াটার প্রুফ গাউন, গ্লভস ইত্যাদি ব্যবহার করেন।

আইইডিসিআর (IEDCR):

করোনাকালে বাংলাদেশে বহুল আলোচিত-সমালোচিত আরেকটি শব্দ হলো আইইডিসিআর। IEDCR-এর পূর্ণরূপ হলো Institute of Epidemiology, Disease Control and Research. বাংলায় “রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট”। এটি ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত। বাংলাদেশে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার প্রথম দিকে একটি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন IEDCR-এর তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।