বর্তমান বিশ্বের সবচে আলোচিত বিষয় হলো করোনা রোগ বা COVID-19। যে ভাইরাসের দ্বারা এই রোগটির সংক্রমণ হয় তার নাম দেয়া হয়েছে 2019 Novel Corona Virus (2019-nCoV)। আজ পর্যন্ত (২৫.০৩.২০২০) বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় বিশ হাজার। বাংলাদেশে সনাক্ত করা হয়েছে চল্লিশ জন, যার মধ্যে পাঁচ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
করোনা রোগের কারণ:
করোনা রোগে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসলে নতুন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। আবার তার হাঁচি-কাশি ইত্যাদির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস বাতাসে ছড়িতে পড়ে।
করোনা রোগের লক্ষণ:
আমাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলেই যে সাথে সাথে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে এমন নয়। করোনা ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর ১ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে। এই সুপ্ত থাকার সময়টাকে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিওড (Incubation Period)।
সুপ্তাবস্থার পর করোনার সাধারণ যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে সেগুলো হলো:
- জ্বর
- ক্লান্তি
- শুকনো কাশি
অন্যান্য আরো যেসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে:
- শ্বাসকষ্ট
- ব্যথা
- গলাব্যথা
- ডায়রিয়া
- বমিবমি ভাব
- সর্দি
এই লক্ষণগুলো প্রথমদিকে সাধারণ মনে হলেও সময়ের সাথে সাথে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে।
করোনা রোগের প্রতিকার:
এখন পর্যন্ত করোনা রোগের কোনো ওষুধ বা টিকা (Vaccine) আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আশার কথা হলো, বেশিরভাগ মানুষই (প্রায় ৮০%) কোনো রকম বিশেষ চিকিৎসা বা যত্ন ছাড়াই সেরে উঠেন। তবে বয়স্ক ব্যক্তি সহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে সেরে উঠার হারটা স্বাভাবিকভাবেই কম হবে। বর্তমানে লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেমন জ্বরের ক্ষেত্রে জ্বরের ওষুধ, শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে অক্সিজেন ইত্যাদি দিয়ে কষ্ট লাঘবের চেষ্টা চলছে। যেহেতু করোনার সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যকর ওষুধ নেই তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কাম্য।
করোনা রোগের প্রতিরোধ:
করোনার সংক্রমণ রোধে প্রতিরোধমূলক যেসব ব্যবস্থা নেয়া যায় সেগুলো হলো:
- কমপক্ষে ২০ (বিশ) সেকেন্ড সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া। আবার অ্যালকোহলীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়।
- হাঁচি-কাশি ইত্যাদির সময় পরস্পরের মধ্যে এক মিটার বা তিন ফুটেরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখা।
- নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দেয়া।
- চোখ, নাক, কান, মুখ ইত্যাদি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকা।
- করোনা রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে বাসায় অবস্থান করা।
- ফুসফুস দুর্বল করে দেয় (যেমন: ধূমপান) ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
- অযথা বেড়ানো, জনসমাগম করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
- মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ঘড়ি ইত্যাদি ইলেকট্রনিক জিনিস সহ অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা।
- গণপরিবহন (যেমন, বাস, ট্রেন ইত্যাদি) এড়িয়ে চলা।
- মাস্ক ব্যবহার করা।
- স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
- কাঁচা ও আধাসিদ্ধ খাবার না খাওয়া।
- পেশাগত কারণে (যেমন- চিকিৎসক, নার্স) অথবা অন্য যে কোনো কারণে (মৃতের গোসল, দাফন ইত্যাদি) যাদেরকে করোনায় আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি আসতেই হবে তাদের জন্য দায়িত্ব পালনকালে Personal Protective Equipment (PPE) ব্যবহার করা।
এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। যেমন-
- হাত ও পায়ের নখ ছোট রাখা।
- নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেয়া।
- যেখানে সেখানে কফ, থুথু ইত্যাদি না ফেলা।
- পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়মিতভাবে সাবান দ্বারা ধোয়া।
করোনা রোগ প্রতিরোধে নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। আমাদের সচেতনতাই পারে বিশ্বকে করোনা মুক্ত করতে।
প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়:
করোনা প্রতিরোধে প্রাসঙ্গিকভাবে আরো যা করতে হবে :-
- গুজব না রটানো।
- গুজবে কান না দেয়া এবং ঐ গুজব নতুন করে না ছড়ানো।
- করোনাকে নয়, করোনার মালিক আল্লাহ্কে ভয় করি। পাপ ও দুর্নীতি ছেড়ে দিই। বেশি বেশি আমল করি, দান-সদকা করি আর দোয়া করি।
- নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।
করোনা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু লিংক:
করোনা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু লিংক নিচে দেয়া হলো: