ফাতিমা-মারইয়ামের কীর্তিকলাপ

সর্বশেষ আপডেট:

আমার বড় দুই মেয়ে – ফাতিমা আর মারইয়াম। ওদের যেন কাজের কোনো ঠিক নেই। আবদারেরও কোনো শেষ নেই। খেলাচ্ছলে ওদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন আমাকে বিনোদিত করে, অন্যদিকে তেমনি মাঝে মাঝে কষ্টও দেয়। এ রকমই কিছু বিষয় এ নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে।

ফাতিমা কোল ছাড়া কিছু বুঝে না:

ফাতিমার বয়স প্রায় তিন বছর হতে চলল। কিন্তু এখনও সে যতক্ষণ জেগে থাকে, তার অনেকটা সময় কোলে থাকতে চায়। ঘুম থেকে উঠেও কোল, ঘুমুতে যাবার সময় কোল, এমনকি তাকে কোলে নিয়ে হেঁটে-হেঁটে ঘুম পাড়াতে হয়। এ বয়সে অন্যান্য বাচ্চাদের যেখানে কোলে রাখাই যায় না, ছটফট করে, সেখাতে ফাতিমা কোল ছাড়া কিছু বুঝে না। কোলো রাখতে রাখতে মাঝে মাঝে কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো, আজ (১৮/০১/২০২০ ইং) সকালে এই নিবন্ধটার খসড়া কাগজে লিখার শুরুতে (কম্পিউটারে টাইপ করার সময় নয়) ফাতিমা ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ ও ঘুম খেকে উঠে পড়ে। তারপর ওকে কোলে নিয়েই অনেকটা লিখতে হয়েছে।

কান্না হলো ফাতিমার নিত্য সঙ্গী:

ফাতিমা কিছুটা ছিঁচকাঁদুনে টাইপের। খুব সামান্যতেই কেঁদে দেয়। মাঝে মাঝে কাঁদতে কাঁদতে বিরক্তি ধরিয়ে দেয়। একদিন ওর মা ওর কান্নার কথা তুলল। আমি বললাম, ওর বেশি বেশি কান্নার একটি ভালো দিক আছে। পরকালে আমাদের নাজাতের জন্য সে আল্লাহ্‌র দরবারে এমন কান্না শুরু করে দিবে যে, আল্লাহ তায়ালা ওর কান্না থামাতে আমাদের জান্নাতই দিয়ে দিবেন। (আমীন)

আমার আব্বা:

ফাতিমা আর মারইয়াম প্রায়ই এটা-সেটা নিয়ে ঝগড়া করে। ফাতিমা একটা খেলনা নিলো তো মারইয়াম “আমার” বলে ঐ খেলনাটা নিতে চায়। ফাতিমাও বলে “আমার”। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কাড়াকাড়ি লেগে যায়। অন্যদিকে মারইয়াম একটা জুতা পড়লো তো ফাতিমা “আমার” বলে কান্না জুড়ে দেয়। তো যাই হোক, “আব্বা”কে নিয়ে একদিন ওদের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেলো।  ফাতিমা বলে, “আমার আব্বা”। মারইয়াম আর একটু জোর গলায় বলে “আমার আব্বা”। ওদের মা বলে, থামো থামো, তোমাদের দুজনেরই আব্বা।

মারইয়ামের বুদ্ধি:

মনে হয় ফাতিমার তুলনায় মারইয়ামের বুদ্ধি বেশি। সম্ভবত বড় সন্তানদের তুলনায় ছোট সন্তানরা একটু বেশিই চালু ও বুদ্ধিমান হয়। ফাতিমা আর মারইয়ামের পানি খুব পছন্দ। সামনে পানি দেখলে ওদের আর হুঁশ থাকে না। দুষ্টুমি শুরু হয়ে যায়। বাসায় খোলা জায়গায় যে বেসিন রয়েছে সেখানে একটু পানি জমে থাকে। বেসিনটি ওদের তুলনায় একটু উঁচুতে হওয়ায় মোড়াতে দাঁড়িয়ে ঐ পানিতে হাত দেয়। তাই আমি মোড়াটা সরিয়ে রেখেছিলাম। এখন দেখি মারইয়াম বাইরে রাখা বালতিটা কিংবা ওদের খেলনা রাখার ঝুড়িটা নিয়ে আসে, আর ওটাকে উল্টা করে বেসিনের পাশে মেঝেতে রাখে। ফলে উঁচুতে দাঁড়ানোর জন্য মোড়ার মতো একটা প্লাটফরম তৈরি হয়। ওটার উপর দাঁড়িয়ে সে বেসিনের কাজ সারে।

জুতা সমাচার:

আব্বা-আম্মা ইত্যাদির পর ফাতিমা যে শব্দটা প্রথমে শিখেছিল তা হলো “জুতা”। প্রথম যখন এই শব্দটা শিখে তখন সারাক্ষণ জুতা, জুতা বলত। আর এখন মারইয়ামের জন্য কোনো জুতা আনলে ফাতিমা সেটা দখল করে নেয়। মারইয়ামকে বাধ্য হয়ে ফাতিমার আগের জুতাটা পড়তে হয়। ফাতিমাকে সম্ভবত দশ মাস বয়স থেকে সেন্ডেল পরানো হয়েছিল। ফাতিমা-মারইয়াম দুজনেরই একটা ভালো গুণ হলো, ওরা খুব ছোট বেলা থেকেই সঠিকভাবে স্যান্ডেল পরতে পারে। অর্থাৎ, ডান পায়ের জুতা ডান পায়ে আর বাম পায়ের জুতা বাম পায়ে পরতে পারে। হয়তো হাজারে একবার উল্টা পরে থাকে। তাও হয়তো ইচ্ছে করেই পরে।

নিচে ফেলার মজার খেলা:

ফাতিমা যখন হামাগুড়ি দেয়া শিখে, ১০ মাস বয়সে, বিছানার কিনারে এসে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতো। হাতের নাগালে যা পেতো নিচে ফেলে দিতো। তারপর নিচে তাকিয়ে দেখতো বস্তুটির কী অবস্থা। একটু বড় হলো। কর্মসূত্রে আশুগঞ্জ এসে তৃতীয় তলায় বাসা ভাড়া নিলাম। তখন ফাতিমা প্রিয় খেলাটিকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে গেলো। বারান্দা কিংবা খোলা জানালা দিয়ে টুকটাক জিনিসপত্র নিচে ফেলতে লাগলো। বেশ কয়েক মাস হলো, ফাতিমা বুঝতে শিখেছে। ও এখন আর জিনিসপত্র নিচে ফেলে না। অবশ্য তার প্রয়োজনও নেই। ওর শাগরেদ মারইয়ামই এখন জিনিসপত্র নিচে ফেলার কাজ করে দেয়। মনে হয় মারইয়ামকে শিখিয়ে দিয়ে নিজে মহৎ এ কাজ থেকে ইস্তফা দিয়েছে। তো মারইয়াম আজকে (২০.০৪.২০২০) ওষুধের একটি খালি কৌটা বারান্দা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে আমাকে ধরেছে নিয়ে আসার জন্যে। ভাবলাম কৌটাটি ওর মনে ধরেছে। তাই আমাকে নিয়ে আসতে বলছে। দুই মেয়েকে নিয়ে নিচে গেলাম। অবশ্য ওদেরকে নিয়ে আগেও নিচে গিয়েছি। নিচে গিয়ে ওদের প্রিয় সাফিয়া আপুকে দেখতে পেলো। সামনে দেখি বড় চিড়ুনি, খেলনা গাড়ির সিট, মামপটের ঢাকনা, আর ওষুধের ঐ খালি কৌটাটা পড়ে রয়েছে। সাফিয়া আপুকে ছেড়ে আর আসতে চায় না। জোর করে উপরে নিয়ে আসলাম। বাসায় এসেই মারইয়াম বারান্দায় ছোট্ লাগালো। ওষুধের কৌটাটি আবার নিচে ফেলে দিলো। ফিরে এসে ওটা আবার নিয়ে আসতে বলে। না, আর নিয়ে আসতে যাবো না। আবার নিচে যাওয়ার ধান্ধা আরকি।

নিজেকে শোধরাতে হবে:

ফাতিমার জন্যে একটা বই কিনে এনেছি। তো ঐ বইয়ে অনেকগুলো বাচ্চার ছবি আছে। ফাতিমা বলে, আব্বা এইটা কী? আমি বলি, বাবু। ফাতিমা বাবুর পায়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলে, এইটা কী? আমি বলি, জুতা। তখন সে বলে, বাবুর জুতা নিবা/পরবা (নিবো/পরবো)। নিরুপায় হয়ে অমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি, এটা জুতা না, জুতার ছবি। না, ও বুঝেই না। ওই জুতা ওর চাই-ই-চাই। জুতা যে ওর খুব প্রিয়। ইশ, কেন যে জুতার ছবিকে জুতা বলতে গেলাম! এখন থেকে শুধরে কথা বলতে হবে।

কাড়াকাড়ি:

সম্ভবত দুই মাস বা তারো বেশি হলো ফাতিমা‌‌র একটি বাজে অভ‍্যাস হয়েছে। আর তা হলো, মার‌ইয়ামের হাতে যা‌ই দেখে তা নেয়ার জন্যে অস্থির হয়ে যায়। প্রথম দিকে সুন্দর করে চাইলে মার‌ইয়াম দিয়ে দিতো। আর ধমক দিয়ে চাইলে আরো একরোখা হয়ে যেতো, দিতো না। কেড়ে নিলে কান্না জুড়ে দিতো। অবশ্য ফাতিমা সাধারণত জোর করে নেয়ার‌ই চেষ্টা করতো। ফাতিমাকে বুঝাতাম, ভালোভাবে দিতে বলো, মার‌ইয়াম দিয়ে দিবে। তখন ফাতিমা সুন্দর করে মার‌ইয়ামকে বলতো, মার‌ইয়াম ওটা দাও। আর সঙ্গে সঙ্গে মার‌ইয়াম ‘নাও’ বলে হাত বাড়িয়ে তা দিয়ে দিতো। ইদানিং মার‌ইয়াম‌ও কঠোর হয়ে যাচ্ছে। সহজে আর দিতে চায় না। ফাতিমাও নাছোড়বান্দা, নিয়েই ছাড়বে। তো মার‌ইয়াম নতুন কৌশল আয়ত্ত করেছে। ফাতিমা যখন বারবার কোনো কিছু চাইতে থাকে, তখন মার‌ইয়াম হাত বাড়িয়ে বলে, ‘নাও’। ফাতিমা ওটা নিতে গেলেই হাত টেনে নেয়। নিরাশ হয়ে ফাতিমা জুড়ে দেয় কান্না। (৩০.০৫.২০২০)

লাল মুখের রহস্য:

বিবির খুব বেশি পান খাওয়ার অভ্যাস। বিবি হলো আমার দাদী-শাশুড়ি। আমাদের মুখে শুনতে শুনতে ফাতিমা মারইয়ামও উনাকে বিবি বলেই ডাকে। তো সুপারি চিবিয়ে খেতে পারেন না বলে ছেঁচনি এনে দিয়েছি। ছেঁচনিতে পান-সুপারি ছেঁচে মুখে দিয়ে রস আস্বাদন করেন। পান ছেঁচার শব্দ শুনলেই ফাতিমা চলে যায় বিবির ঘরে। বিবির কাছ থেকে এক রকম জোর করেই বাটা পান নিয়ে খাওয়া শুরু করে। পান চিবুতে চিবুতে মুখ লাল করে ফেলে। ওর মুখ চাবানো আর লাল মুখ দেখে আমি বলি, কি খাও? ফাতিমার মুচকি হেসে বলে, পান। ফাতিমার পান খাওয়া নিয়ে দু’লাইনের একটা গান বানিয়েছি।

পান খাইয়া মুখ লাল করিলা ওগো ফাতিমা। (২ বার)
ফাতিমাগো ফাতিমাগো ফাতিমাগো মা।

কে ছোট?

ফাতিমা-মারইয়াম ইদানিং প্রায়ই এটা-সেটা নিয়ে ঝগড়া করে। আজ সকালে ওরা ঝগড়া বাধিয়ে দিয়েছে, “কে ছোট” এই বিষয় নিয়ে। ফাতিমা বলে, আমি ছোট। মারইয়ামও বলে, ওই, আমি ছোট। ঘুমিয়ে ছিলাম। ওদের চিল্লাচিল্লিতে আর থাকতে পারলাম না। রাগত স্বরে বললাম, ফাতিমা বড়, আর মারইয়াম ছোট। আমার কথা শুনে ফাতিমা কান্না শুরু করে দিলো। (২৭.০৪.২০২০)

আচ্ছা কার কথা ঠিক? ফাতিমা, মারইয়াম, না ওদের আব্বার কথা? ফাতিমা প্রায়ই বিভিন্ন কাজ করতে চায়। তখন ওকে বলি, তুমি এখনো ছোট। আগে বড় হয়ে নাও, পরে এ কাজ করবে। আমার কথাতো দুরকম হয়ে গেলো।

সং সাজা

ফাতিমা আর মারইয়ামের বিচিত্র ফ্যাশন এর কথা আর কী বলবো। বাসার সবকিছুই যেনো ওদের ফ্যাশনের উপকরণ। কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো। (২২.০৪.২০২১)

  • টুপি: ফাতিমা-মারইয়ামের টুপির যেনো অভাব নেই। হাফপ্যান্ট কিংবা পায়জামাকে উল্টো করে মাথায় পড়ে। হয়ে যায় দুই চোঙা ওয়ালা অদ্ভুত টুপি।
  • হ্যাট বা হেলমেট: পাতিল, বাটি ইত্যাদিকে মাথার হ্যাট হিসেবে ব্যবহার করে।
  • পরচুলা: গামছা, হিজাব, ওড়না ইত্যাদি মাথায় লাগিয়ে প্যাঁচিয়ে লম্বা চুল বানিয়ে নেয়। আবার এই চুলটা কাঁধ বরাবর সামনে এনে চিড়ুনি সুন্দর করে আঁচড়াতে থাকে।
  • জামা: হিজাবকে মাথায় আটকে না রেখে গলায় রেখে দেয়। সুন্দর ঝুলন্ত জামা তৈরি হয়ে যায়। বিশেষ করে মারইয়াম এ রকম করে।
  • শাড়ি: ওদের আম্মুর ওড়নাকে শাড়ির মতো করে পড়ে নেয়।
  • চুড়ি: হেয়ারব্যান্ডকে হাতে পড়ে চুড়ি বানিয়ে নেয়। ফাতিমা এরকমটা বেশি করে।
  • মারইয়াম ওর মার ভ্যানিটি ব্যাগতো আর কাঁধে পরতে পারে না, গলায় ঝুলিয়ে রাখে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।